দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হলো ‘জেসিআই স্মার্ট বাংলাদেশ সামিট ও এক্সপো’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 02:26:23

পর্দা উঠলো দেশে প্রথমবারের মতো জেসিআই বাংলাদেশ আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ সামিট ও এক্সপো’র। দুই দিনব্যাপী এই সামিট ও এক্সপো শুরু হলো রাজধানীর কুড়িলের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায়। শুক্রবার সকালে আয়োজনটির উদ্বোধন করা হয়েছে।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রা ও স্মার্ট যুগের অপার সম্ভাবনাকে সুদৃঢ় করার প্রচেষ্টায় এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাপী তরুণদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জেসিআই বাংলাদেশের আয়োজনে ও এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই-এর সহযোগিতায় আজ (শুক্রবার) ও আগামীকাল (শনিবার) চলবে এই ‘জেসিআই স্মার্ট বাংলাদেশ সামিট, এক্সপো ও সিওয়াইই অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ আয়োজন।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে শুরু হয় দর্শনার্থীদের প্রবেশ। তারপর উদ্বোধন করা হয় সামিট ও এক্সপোর।

প্রধান অতিথি থেকে ‘জেসিআই স্মার্ট বাংলাদেশ সামিট ও এক্সপো’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান)। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ইভেন্টের পরিচালক ও জেসিআই বাংলাদেশের ডেপুটি ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমরান কাদির বলেন, দেশে ২২ লাখ তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করার জন্য তৈরি হচ্ছে। দেশে তরুণদের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে জেসিআই সেই তরুণ জনগোষ্ঠীকে নিয়েই কাজ করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে যে ম্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে জেসিআই সমানভাবে সহযোগিতা করতে চায়।

স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি পিলার বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এটুআই প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার জনাব আনীর চৌধুরী। তিনি তার উপস্থাপনায় সরকার ডিজিটালাইজেশন থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে পদার্পনের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন। তিনি জানান, যেখানে ২০০৮ সালে সরকারের ডিজিটাল সেবা ছিল প্রায় শূন্য। সেখান থেকে ২০২৩ সালে এসে সেখানে ২ হাজারের বেশি সেবা দেওয়া হচ্ছে ডিজিটালি। ২০২৩ সালে এসে ইন্টারনেট পেনিট্রেশনের হার খুবই উচ্চমাত্রায়।

আনীর চৌধুরী তার উপস্থাপনায় ডিজিটাল বাংলাদেশের চারটি মূল বিষয়কে তুলে ধরেন। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি। তিনি দেশের বিভিন্ন উদ্যোগের উদাহরণ দিয়ে দেখান কীভাবে এগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান দিচ্ছেন তরুণরা। আর সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে সবই হাতের মুঠোয়। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের চাকরির বাজার পরিবর্তন হচ্ছে। সেটির জন্য নতুন নতুন দক্ষতা তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জেসিআইয়ের স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে এমন আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানান। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা জেসিআইয়ের তরুণদের একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে উদ্যোক্তা তুলে আনার আয়োজন করার আহ্বান জানান তিনি।

সালমান এফ রহমান বলেন, প্রযুক্তি খুবই দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেটার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন। এখন যেমন বিশ্বে একটা বড় চ্যালেঞ্জ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এটি এখন এমন সব কাজ করছে যা বিশ্বকে একটা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে। এসব নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। টেকনোলজির আরেকটা বড় ধরনের অগ্রগতি হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। যেটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন কাজ করছে। এখন বাংলাদেশ সামনের দিনের প্রযুক্তি নিয়ে কী, কীভাবে কাজ করতে পারে সেটা নিয়ে সরকার একটা নীতিমালা করে দিতে পারে। বেসরকারি বিভিন্ন খাতকে এসব নিয়ে কাজ করতে সুযোগ করে দিতে পারে।

তিনি বলেন, বেসিস প্রেসিডেন্ট বাজেটে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপের বিষয়টি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সেটাতে আমিও একমত। আসলে বাজেটে যেটা হয়েছে সেটা ভুল বোঝাবুঝি। সেটা তারা হয়তো বোঝেননি। আমরা সেটা চূড়ান্ত বাজেটে থাকবে না। হয়তো সেটা শতভাগ করতে পারব না। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি, বাজেটে যেসব সমস্যার কথা উঠেছে সেগুলো আমরা সলভ করব।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ঘোষণা করার পর স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে প্রথম সামিট করছে জেসিআই।

তিনি বলেন, ব্যবসা করবেন শুধু মুনাফার জন্য নয়, সমস্যার সমাধান নিতে আসতে হবে। এটি করতে পারলে করবেন দেখবেন সারা বিশ্বে আপনি মর্যাদা পাবেন। আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশ এমন দশটা স্টার্টআপ পাবে যারা কয়েক মিলিয়ন ডলারের স্টার্টআপ হবে। মিলিয়ন ডলারের স্টার্টআপ হতে বিকাশের লেগেছে ১২ বছর, নগদের ৩ বছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে মেধাবী সাহসী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে এসে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তবেই দেশ থেকে নেতৃত্বদানকারী স্টার্টআপ উঠে আসবে।

এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দেন সেটা নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করেছে। কিন্তু এখন এসে কেউ আর সেটি নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না। কারণ, এখনকার ট্রান্সফরমেশন দেখে এটা আমরা নির্দিধায় বলতে পারি স্মার্ট বাংলাদেশ এখন সময়ের ব্যাপার।

এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, এটুআই সবসময় সরকার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যখন জেসিআই এমন একটি সুযোগ তৈরি করল স্মার্ট বাংলাদেশকে জানানোর জন্য সামিটের সেখানে এটুআই খুব আগ্রহী হয়ে অংশ নেয়ার কথা জানায়। স্মার্ট বাংলাতেশ গড়ে তুলতে হলে বহুমুখী উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে হবে। এখনকার উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো জিনিসে ভয় পাওয়া যাবে না। তবেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

জেসিআই বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, জেসিআইয়ের জুনিয়ার চেম্বারের তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে চাই। ইয়াং উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছি। তাদের কীভাবে বিনিয়োগ দেওয়া যেতে পারে সে বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। সবাইকে এখন বিষয়টিতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

এছাড়া বক্তব্য দেন, বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, জেসিআই বাংলাদেশের ২০২৩ এর ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক ভূঁইয়া , বিজিএমইএ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদুল্লাহ আজীম, এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের (স্বপ্ন) বিজনেস ডিরেক্টর সোহেল তানভীর খান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় জেসিআই বাংলাদেশের চেয়ারপারসন ও স্মার্ট বাংলাদেশ সামিট অ্যান্ড ফাউন্ডেশন কমিটির আহ্বায়ক তাহসিন আজিম সেজানের ধন্যবাদ বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে। তিনি জানান, ‘এক্সপো আয়োজনের মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নামী ব্র্যান্ডগুলো তাদের ভবিষ্যত স্মার্টসল্যুশন প্রদর্শন করার সুযোগ পাচ্ছে। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে মোট ১১টি বিশেষ অধিবেশন বা সেশন থাকছে, উক্ত সেশনগুলোতে দেশ এবং দেশের বাইরের বিশেষজ্ঞ ও বক্তারা উপস্থিত থাকবেন।’

জেসিআই স্মার্ট বাংলাদেশ সামিট ও এক্সপো’র প্রধান লক্ষ্য বিশেষজ্ঞ আলোচনার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরা। আমন্ত্রিত অতিথি ও প্যানেলিস্টরা তাদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও মত বিনিময়ের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ এর সম্ভাবনাময় প্রতিটি দিক তুলে ধরবেন। এছাড়া স্মার্ট এক্সপোতে রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য চমকপ্রদ সকল প্রযুক্তির প্রদর্শন। ভবিষ্যতের স্মার্ট বাংলাদেশ কেমন হবে সেসবের ফিউচারিসস্টিকস আয়োজন।

আয়োজনে সহযোগিতায় রয়েছে তথ্য প্রযুক্তি সংগঠন বেসিস, পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ডেইলি স্টার, এটুআই, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ইউএনডিপি।

স্মার্ট বাংলাদেশ সামিট, এক্সপো ও সিওয়াইই অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ আয়োজনের টাইটেল স্পন্সর স্বপ্ন, পাওয়ার্ড বাই হুয়াওয়ে এবং প্লাটিনাম স্পন্সর বন্ডস্টাইন। গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ইশো, লিঙ্কথ্রি, ওয়েজলি, জিও, মাস্টারকার্ড, এমটিবি, ওয়ালটন, সানাফি কনস্ট্রাকশন, সিনগুলারিটি। অনুষ্ঠানে এন্টারটেইনমেন্ট পার্টনার চরকি, টেলিকম পার্টনার গ্রামীণফোন, ইউনিভার্সিটি পার্টনার উত্তরা ইউনিভার্সিটি, রিসার্চ পার্টনার ক্রিয়েভিশন, সেশন পার্টনার ফাইবার অ্যাট হোম, পিকাবু, ইনোভেশন ইন্টারন্যাশনাল, ফুড পার্টনার প্রিমিয়ার, পোলার। ইভেন্ট পার্টনার হিসেবে থাকছে বাক্কো, ই-ক্যাব ও আইএসপিএবি।

জেসিআই স্মার্ট বাংলাদেশ সামিট, এক্সপো ও সিওয়াইই অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ এর সকল আপডেট জানাতে একটি ওয়েবসাইট উন্মোচন হয়েছে। সাইটটির ঠিকানা www.jcisummit.com

এ সম্পর্কিত আরও খবর