ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় অবদান রাখা কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ.মাজহারুল হক (৯৮) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকার নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে, পাঁচ মেয়ে, আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় থেকেই তিনি মাতৃভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের উদ্যেগে শহীদদের স্মরণে নির্মিত প্রথম ইটের শহীদ মিনার তৈরিতেও তিনি যোগ দেন।
ছাত্রাবস্থায় থাকার সময় ১৯৪৬-৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে ব্রিটিশ হটাও আন্দোলনে প্রবলভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। ভাষা আন্দোলনে সংক্ষিপ্ত কারাবাসসহ সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালে তিনিই প্রথম মুক্তিকামী কিশোরগঞ্জবাসীকে স্বাধীনতার ঘোষণা অবহিত ও প্রচার করেন। তাঁর নেতৃত্বে নিজ বাসভবনেই আত্মসমর্পনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
তিনি মাতৃভূমির প্রায় প্রতিটি বিজয়-সংগ্রামেই, বিশেষ করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিসংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় অবদান রাখেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের গৌরাঙ্গবাজারের বাসিন্দা ভাষাসৈনিক ডা. এ.এ.মাজহারুল হক শুধু মুক্তিযুদ্ধেই অংশগ্রহন করেননি, মানুষের সেবায়ও নিয়োজিত ছিলেন। দীর্ঘ ৬৯ বছর তিনি কিশোরগঞ্জের গরিব, অসহায় মানুষদেরকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন। এছাড়াও একজন সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ হিসেবেও মানুষের পাশে থেকে তাঁদের কল্যাণে নিরন্তর ভূমিকা রেখেছেন। ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মরহুম বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করে গেছেন।
এছাড়া বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
ডা. এ.এ.মাজহারুল হক এর মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
ডা. এ.এ.মাজহারুল হক এর বড় ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজ এবং মেয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি শায়লা পারভীন সাথী তাদের পিতার আত্মার মাগফেরাত কামনার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।