গ্রামগঞ্জের আজ বাঁকা মেঠো পথে ধীরে বয়ে চলা গরুর গাড়ি এখন আর চোখেই পড়ে না। কালের পরিক্রমায় আধুনিকতায় স্পর্শে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতিময়।
প্রাচীনকাল থেকে দেশের গ্রামীণ যোগাযোগের যাতায়াত ও মালামাল পরিবহণের ক্ষেত্রে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল। বাঙালির ঐতিহ্য গরুর গাড়ি যান্ত্রিক সভ্যতার মুখে এখন শুধুই অতীত। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে প্রচলিত এবং যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন ছিল এই গরুর গাড়ি।
যুগ আগেও যেকোনো পণ্য পরিবহনের প্রচলন ছাড়াও বিয়ের বর-কনে বহনে বিকল্প কোনো বাহন কল্পনাই করা যেত না গরুর গাড়ি ছাড়া । যেসব পরিবারে গরুর গাড়ি ছিল তাদের কদরের সীমা ছিল না। কৃষকরা প্রতিদিন ফজরের আজানের আগে গরুর গাড়িতে করে কখনো জৈব সার, কখনো বা গরুর খাবার ও লাঙল-মই-জোয়াল দিয়ে মাঠে দেয়। বিভিন্ন উৎসব পার্বণে এটি ছিল অপরিহার্য।
আগে অনেকেরই এই গাড়ি ছিল উপহারের একমাত্র অবলম্বন। গ্রামের বউদের নাইওর যেতে গরুর গাড়ি অহরহ ব্যবহৃত হতে দেখা যেত। গাড়ি চালানের সময় আনন্দে গাড়িয়ালরা গান গাইতেন 'ওকি গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে'। বাহের দেশের এই আঞ্চলিক গানটি বেশ পরিচিত।
এখন চেয়ে থাকলেও গরুর গাড়ি আর চোখে পড়ে না। আর সেসব গাড়িয়ালের সেই গাড়িও আর নেই। আধুনিকতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে গাড়িয়াল পেশাও। যা ছিল বংশে পরম্পরায়। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের বাহক অনেক বাহনেরই আমূল পরিবর্তন আধুনিকায়ন হয়েছে।
সাহেবগঞ্জের বেশকয়েকজন গরুর গাড়িয়াল বলেন, বর্তমানে সবকিছুই পরিচালিত হচ্ছে আধুনিক। পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থান, এবং গ্রামের বাহন থেকে সবকিছুই আধুনিক গাড়ির উপর নির্ভর। তাই কদর কমেছে গরুর গাড়ির। আমরাও বাদ দিয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়ি কিনে জীবিকা নির্বাহ করছি। আর তাই আগের মতো অত গরুর গাড়ির চাহিদা না থাকায় বর্তমান প্রজন্মের কাছে হারিয়ে গেছে এই গাড়ি। আজ শহরের ছেলে-মেয়েরা তো দূরের কথা গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও ঠিক ভাবে গরুর গাড়ির সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নয়।
গরুর গাড়ি পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন। এতে শুধু কম জ্বালানি লাগে না। আবার ধীরগতির কারণে এতে তেমন কোনো দুর্ঘটনারও আশঙ্কাও থাকে না। বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত নেই গরুর গাড়ি। গাড়িয়াল বন্ধুর গানটির ব্যবহারও অনেক কমে এসেছে। আজকাল শহরের মত গ্রামেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। আধুনিক যানবাহনেও ভিড়ে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি আজ বিলুপ্তির পথে।