মো. কামরুল হাসান আলভি। বয়স মাত্রই ১৫। প্রস্তুতি নিচ্ছিল এসএসএসি পরীক্ষা দেওয়ার। কিন্তু তারই আগে জীবনের পরীক্ষায় হার মানল শিক্ষক দম্পত্তির তরতাজা ছেলেটা। ডেঙ্গু তাকে নিয়ে গেছে জীবনের ওপারে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর গত ১৩দিন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল আলভি। এর মধ্যে ১১দিন ছিল লাইফ সাপোর্টে। সোমবার (২০ নভেম্বর) বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় তার অন্তিমযাত্রা।
আচমকা ছেলেকে হারিয়ে কথা বলার সব শক্তিই হারিয়েছেন মা আগ্রাবাদ তালেবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নাঈমা সুলতানা ও বাবা বাশঁখালী আলাওল সরকারি কলেজের শিক্ষক আতাউর রহমান। ঘর রাঙিয়ে রাখা বড় ছেলেটার মৃত্যুতে নগরীর আগ্রাবাদ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় অবস্থিত তাদের বাসায় নেমে এসেছে শোকের নিস্তব্ধতা। বাদ মাগরিব হাউজিং সোসাইটি মসজিদে জানাজা পড়তে নিয়ে যাওয়ার সময় তাই অস্ফুট স্বরে শোকাহত বাবা মা কাঁদতে কাঁদতে শুধু
বলছিলেন, 'এভাবে আমাদের একা করে কোথায় চলে গেলি বাবা?' জানাজায় শতশত শোকার্ত মানুষ অংশ নিযে আলভির বাবাকে সমবেদনা জানান।
প্রথম জানাজা শেষে আলভির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি আনোয়ারায়। সেখানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয় এই কিশোরকে।
হালিশহর হাউজিং সেটেল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ত আলভি। সোমবার ছিল এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের শেষ দিন। বন্ধুরা যখন সেটি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন, তখন হাসপাতালের বেডে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণ পার করছিল এই কিশোর।
নাঈমা আতাউর দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে আলভি বড়। তার ছোটভাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে সুস্থ আছে। তবে হাসপাতাল থেকে আর বাসায় ফেরা হলো না আলভির।
এক সম্ভাবনাময়ী কিশোরের এমন মৃত্যু মানতে পারছে না কেউই। জানাজার নামাজে ইমামতি করা মাওলানা আইয়ুব আলী আনসারির কণ্ঠও ভিজে উঠে আলভির কথা ভেবে। মুসল্লিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আলভি পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো মসজিদেই। এমন একটা ভালো ছেলের জানাজা আমাকে পড়াতে হবে কখনো ভাবিনি।
আলভির আত্মীয় চান্দগাঁও হাসান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহমিনা শারমিন। সামান্য একটা মশার কামড়ে এমন একটা তাজা প্রাণকে চলে যেতে হবে, কোনোভাবেই মানতে পারছেন না এই শিক্ষক। তাই তিনি প্রশ্ন ছোড়েন, 'ডেঙ্গুতে আর কত প্রাণ চলে গেলে তবে আমাদের কর্তাব্যক্তিদের টনক নড়বে?'
এই প্রশ্নের কোনো উত্তর যেন নেই সিটি করপোরেশনের!