বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরা ও এর আশেপাশের উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ স্বাদু পানির সংকট দীর্ঘ দিনের। সাম্প্রতিক সময়ে এসব অঞ্চলে নিরাপদ পানির প্রধান উৎস গভীর নলকূপ থেকেও চাহিদামত পানি পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। সুপেয় পানির অন্য উৎসগুলোয় লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষেরা।
বর্ষা মৌসুমে নানা উপায়ে বাড়িতে বাড়িতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা ব্যবহার করা গেলেও সম্প্রতি শীতের আগমনে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এসব রিজার্ভ ট্যাংকে সংগৃহীত পানিও ফুরিয়ে এসেছে। এছাড়া পুকুরের পানিও তলানিতে ঠেকেছে। এমতাবস্থায় সুপেয় স্বাদু পানির অভাবে হাহাকার দেখা দিয়েছে সাতক্ষীরায়। কলসি নিয়ে মাইলের পর মাইল হেটেও পানি পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। সাধারণত শীতের মৌসুম থেকে বর্ষা আসার আগ পর্যন্ত একটা লম্বা সময় এই দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় উপকূলের সাধারণ মানুষকে।
সংকট নিরসনে দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি করে আসছেন উপকূলবাসী। নিরাপদ পানির বিকল্প উৎস খোঁজতে কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) সকালে নিরাপদ ও সুপেয় পানির দাবিতে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকা হরিশখালিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহযোগিতায় কলস নিয়ে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের হরিশখালিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, স্থানীয় সরকার, যুব সংগঠন কোস্টাল ইয়ুথ নেটওয়ার্ক, সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম (এসএসএসটি) ও উপকূলীয় শিক্ষা বৈচিত্র্য উন্নয়ন সংস্থা (সিডিও) জলবায়ু সংকটে উপকূলীয় কলসবন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্যামনগর এলাকাবাসী প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মোকাবিলা করে টিকে থাকে। এর মধ্যে বর্ষা মৌসুমের পরবর্তীকালীন সময়ে শুরু হয়ে যায় স্বাদু পানির চরম সংকট। দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার চারদিক লবণ পানি দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় পান করার উপযোগী না হলেও অনেকটা বাধ্য হয়ে এলাকার অনেকে মৃদু লবণ পানি পান করে থাকে। ভূ-পৃষ্ঠের সুপেয় পানির উৎসগুলো বাড়াতে সরকারি উদ্যোগে পুকুর খননসহ এ অঞ্চলের সমস্যা সমাধান করা জরুরি।
স্থানীয় নারীরা জানান, অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। দস্তার কলসে দূর থেকে এই পানি সংগ্রহ করার ফলে আমরা কোমরে ব্যথা, মাজার হাড় ক্ষয়ে যাওয়া, কিডনির সমস্যাসহ অনেক রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকি। বাধ্য হয়ে লবণাক্ত পানি পান করায় আমাদের আমাদের নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। অতি লবণাক্ত পানির ব্যবহারের ফলে শিশু ও নারীদের চর্মরোগ, স্ক্রীন কালো হওয়া, গর্ভপাত, অপরিপক্ক সন্তান জন্ম, প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম, জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যাসহ ক্যান্সারেরমত নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
তারা বলেন, পানি কোন পণ্য নয় এটি আমাদের ন্যায্য অধিকার। নারীদের গোসল থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেচরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নিরাপদ পানি আমাদের প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার। তবে আমরা কেন এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। আমরা এই দূর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই।
মানববন্ধনে মনন্ঞ্জয় মণ্ডলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মহিলা ইউপি সদস্য ফরিদা খাতুন, আজমুননাহার বেগম, উপকূলীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুদা মালি, কোস্টাল ইয়ুথ নেটওয়ার্কের রাইসুল ইসলাম, সিডিও ইয়থ টিমের সদস্য শাহিন হোসেন, এসএসএসটি যুব টিমের মো. সাইদুল ইসলাম, বারসিক এর বরষা গাইন, লিপিকা গাইন, মুকুন্দ ঘোষ প্রমুখ।