অকস্মাৎ বিদীর্ণ হয়ে গেলো বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) দিন শেষের শীতার্ত রাত। সুদূর ব্যাংককের হাসপাতাল থেকে জননেতা সৈয়দ আশরাফের মৃত্যু সংবাদ ভেসে আসতেই শোক ও বেদনায় আবৃত হলো সমগ্র কিশোরগঞ্জ।
কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুরের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন চরম অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সৈয়দ আশরাফের অনুপস্থিতিতে তাঁর হয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে ভোট চেয়েছিলেন। নজিরবিহীন জনসমর্থন পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। কিশোরগঞ্জ সদরের যশোদল ইউনিয়নের বীর দামপাড়া গ্রামের জাতীয় নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের জেষ্ঠ্যপুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বার বার বিজয়ী করেছে এলাকাবাসী।
এবারও জনতা অপেক্ষায় ছিল নেতার প্রত্যাবর্তনের। বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা যখন শপথ গ্রহণ করেন, তখন অসুস্থ সৈয়দ আশরাফের ফিরে জন্য সময় চাওয়া হয়। কিন্তু কে জানতো, এমন একটি দিনে তিনি চলে যাবেন সকল চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে!
তাঁর চরম অসুস্থতার খবর সবারই জানা ছিল। তারপরেও আশায় ছিল মানুষ। উন্নত চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে তিনি ফিরে আসবেন বলে প্রত্যাশা ছিল সর্বস্তরের মানুষের। অকস্মাৎ তাঁর মৃত্যু সংবাদ এসে উপস্থিত হবে, এমনটি কেউ কল্পনাও করতে পারেন নি।
সৈয়দ আশরাফের মৃত্যু সংবাদে শীতের ঘুমন্ত রাতটি নিস্তব্ধতা ভেঙে জেগে ওঠে। শোকার্ত কিশোরগঞ্জবাসী বেদনার নীল অক্ষরে পুঞ্জিভূত স্মৃতি ও স্মরণের কথামালায় প্লাবিত করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সাইবার স্পেসের নিউজ ফিড এবং ওয়াল ভরে যায় ছবি ও শোকবাণীতে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক স্মৃতি, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আর মূল্যায়নের ভাষায় মৃত্যুর সীমানা পেরিয়েও জীবন্ত হয়ে উঠেন অনুকরণীয় রাজনীতিবিদ সৈয়দ আশরাফ। একজন সাহসী, ত্যাগী, বিশ্বস্ত, সৎ, নির্লোভ নেতার প্রতিমূর্তিতে বিনির্মিত হন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
দল ও নেত্রীর বিপদে তিনি ছিলেন সাহসের প্রতীক। রাজনীতি করতে গিয়ে আরো দরিদ্র হয়েছেন। সম্পদও হ্রাস পেয়েছে। দুর্নীতি ও অন্যায় তাঁর ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে পারে নি কখনোই। তাঁকে দিয়ে কোনো তদবির করাতে কেউ কোনো দিনই সফল হন নি। মুখের উপর অন্যায় অবদান না করে দিতে সৈয়দ আশরাফ এক বিন্দু সময় নেন নি। দলের রাজনীতি ও মতাদর্শ ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। স্ত্রী-কন্যাকে যথেষ্ট সময় তিনি দিতে পারেন নি। স্ত্রী বিয়োগের পরেও রাজনীতির জন্য জীবনের সকল সময় উৎসর্গ করেছেন।
কিশোরগঞ্জের দলীয় নেতা, কর্মী, সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষণজন্মা রাজনীতিবিদ সৈয়দ আশরাফের উজ্জ্বল উপস্থিতি অম্লান হয়ে থাকবে। শোকবাণীতে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ‘ধ্রুবতারা’ আখ্যা দিয়ে যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এবং জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহের রাজনৈতিক আকাশে তিনি ধ্রুবতারার মতোই উদ্ভাসিত হবেন।