নারী ও শিশু নিরাপত্তা নতুন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ!

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 06:07:45

নারীর ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। বিগত ১০ বছরে নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকার অনেক কিছু করেছে। কিন্তু নারী ও শিশু নিরাপত্তার বিষয়ে দেশ এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সময়ের সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতনের হার বেড়েই চলছে।

সামাজিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ও নিপীড়নের ঘটনার সঠিক বিচার না হওয়ার প্রবণতা নারী ও শিশু নির্যাতনকে আরও উৎসাহী করছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। গঠিত হতে যাওয়া নতুন সরকারের জন্য নারী ও শিশুকে নিরাপত্তা দেয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে অনেকেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে দেশে নানা অজুহাতে চলছে নারী ও শিশু নির্যাতন। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মধ্যবাগ্যা গ্রামের এক নারীকে (৪০) তার বাড়িতে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। বিশেষ একটি দলকে ভোট দেয়ার কারণে স্বামী ও সন্তানকে বেঁধে তাকে গণধর্ষণ করা হয়।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে সারা দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণের সর্বমোট ৯৪২টি ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৮২ জন নারী ও শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়। আর এসব ঘটনায় ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে ৬৩ জনকে।

অন্যদিকে সারা বছরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারী ও শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৬৪ জন। এছাড়া যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২১২ জন গৃহবধূ। যাদের মধ্যে ১০২ জনকে হত্যাও করা হয়েছে।

মহিলা পরিষদের প্রতিবেদনে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বছরটিতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় ২৮১ জন। শুধুমাত্র ২০১৮ সালেই মোট ৩ হাজার ৯১৮ জন নারী ও কন্যাশিশুকে নির্যাতন করা হয়। বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে ৩০৫ জন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।

অন্যদিকে বিভিন্ন কারণে সারা বছরে মোট ৪৮৮ জন নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ৩৯ জনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সারা বছরে ৮৭ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৫৮ জনকে হত্যা করা হয় এবং ৪ জন গৃহকর্মী আত্মহত্যা করে।

প্রতিবেদনটিতে আরাও বলা হয়, বছর জুড়ে বেড়েছে নারী ও শিশুদের ওপর উত্ত্যক্ত করার মতো ঘটনাও। সারা বছরে ১৭১ জন নারী ও শিশু উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৪ জন আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে ৩৭৭ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে দেশ নারীর ক্ষমতায়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও নির্যাতন বন্ধে তেমন কার্যকর ভূমিকা ছিল না। বছর বছর শুধুমাত্র নতুন নতুন আইন হলেও তার কোনো প্রয়োগের বিষয়ে অগ্রগতি দেখা যায়নি। ফলে বিচারহীনতার অভাবে সারা দেশে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে নারী। তাই নতুন সরকারের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নারী ও শিশু নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এ বিষয়ে মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী অ্যাড. এলিনা খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং নির্যাতনের পর হত্যা বেড়ে চলছে। এ অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। অনেক অনেক আইন হচ্ছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। তাই আমি মনে করি, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করে তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা নতুন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমি আশাবাদী বর্তমান সরকার এ বিষয়ে কাজ করবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর