দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১২টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী। তিনটি আসনে বড় ব্যবধানে জিতেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকি একটি আসনে জয় পেয়েছে জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙল প্রতীকের প্রার্থী। এবার চট্টগ্রামের নির্বাচিত ১৬ জনের মধ্যে সাতজন নতুন প্রতিনিধি। পুরোনো এমপি রয়েছেন ৯ জন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী চট্টগ্রাম-১ আসনে ৮৯ হাজার ৬৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯৯৫ ভোট। এই আসনে রুহেল- গিয়াস ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন আরও ৩ জন।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ১ লাখ ৬৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের একমাত্র নারী প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তরমুজ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৬৬ ভোট। এই আসনে সনি-তৈয়ব ছাড়াও ভোটের মাঠে ছিলেন আরও ৭ প্রার্থী।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে ৫৪ হাজার ৭৫৬ ভোট পেয়ে টানা তৃতীয়বাবের মত বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জামাল উদ্দিন পেয়েছেন ২৮ হাজার ৭০ ভোট। এই দুজন ছাড়াও সন্দ্বীপ আসনে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন আরও ৬ প্রার্থী।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে ১ লাখ ৪২ হাজার ৭০৮ ভোটে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম আল মামুন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী দিদারুল কবির পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৮০ ভোট। এছাড়াও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন আরও ৫ জন।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে টানা তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জোটের মনোনয়ন পাওয়া জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের আনিসুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৫০ হাজার ৯৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান পেয়েছেন ৩৬ হাজার ২৫১ ভোট।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে টানা পঞ্চম বারের মত জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ৫৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজম পেয়েছেন ৩ হাজার ১৫৯ ভোট।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে চতুর্থবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামি ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী মুহাম্মদ ইকবাল হাছান পেয়েছেন ৯ হাজার ৩০১ ভোট।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চাদগাঁও) আসনে ৭৮ হাজার ২৬৬ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুছ ছালাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরী পেয়েছেন ৪১ হাজার ৫০০ ভোট৷ এই আসনে ছালাম-বিজয় ছাড়াও নির্বাচনের মাঠে ছিলেন আরও ৮ প্রার্থী।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে দ্বিতীয়বারের মত বিজয়ী হয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৯৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সনজিদ রশিদ চৌধুরী পেয়েছেন ১ হাজার ৯৮২ ভোট।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাঁচলাইশ) আসনে ৫৯ হাজার ২৪ ভোট পেয়ে হ্যাভিওয়েট প্রার্থী সাবেক মেয়র মনজুর আলমকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফুলকপি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৫৩৫ ভোট। এই আসনে এই দুই প্রার্থী ছাড়াও ভোটের মাঠে ছিলেন আরও
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) আসনে ৫১ হাজার ৪৯৪ ভোট পেয়ে টানা চতুর্থ বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এম এ লতিফ। এই আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতার আবাস থাকলেও ৪ হাজার ৯৬৯ ভোটে হেরেছেন হ্যাভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন। তিনি পেয়েছেন ৪৬ হাজার ৫২৫ ভোট। এই আসন থেকে ভোটের মাঠে ছিলেন আরও ৫ জন।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে ১ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ৩৫ হাজার ২৪০ ভোট।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনেয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে ৬০ হাজার ৭৯ ভোট পেয়ে চতুর্থবারের মত বিজয়ী হয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামি ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী মাস্টার আবুল হোসেন পেয়েছেন ১ হাজার ৬৬১ ভোট।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে ৭১ হাজার ১২৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল জাব্বার পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৮৮৪ ভোট।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে হ্যাভিওয়েট প্রার্থী টানা দুইবারের সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে হারিয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেব। তিনি পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৬২৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী পেয়েছেন ৩৯ হাজার ২৫২ ভোট।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান। তিনি পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৪৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ কবির লিটন পেয়েছেন ৩২ হাজার ২২০ ভোট। নির্বাচন চলাকালীন এই আসনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধমকানোর অভিযোগে প্রার্থীতা হারান আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। এতে তার ভোট বাতিল হিসেবে গন্য হওয়ায় এই আসনে মোট বাতিল ভোটের সংখ্যা দাড়ায় ৩৬ হাজার ৯৬৮ টি।
রোববার (৭ জানুয়ারি) রাতে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে থেকে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জয়ী প্রার্থীদের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন। অন্যদিকে নগরীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৬ আসনের রিটার্নিং অফিসার ও বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম জিমনেসিয়াম নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোটগ্রহণ কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। এসব আসনে ৪২ দশমিক ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে।'
নগরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, আমরা ৬ আসনের ৮৯৬টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেছি। এসব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আমাদের সহযোগিতা করায় চট্টগ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।