তীব্র শীতে বাড়ছে শিশুরোগী, হাসপাতালে শয্যা সংকট

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,চাঁদপুর | 2024-01-13 13:43:17

তীব্র শীতে চাঁদপুরের হাসপাতালগুলোতে সর্দি, কাশি, ও এ্যাজমাসহ ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়ছে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলোতে বাড়ছে শিশুসহ নানা বয়সের রোগীর চাপ। হাসপাতালে বেড না থাকায় বারান্দায় ও ফ্লোরে রেখে অনেক রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আবার বেডের অভাবে বহিঃবিভাগে চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে রোগীদেরকে ছাড় দেয়া হয়। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি।

এদিকে মতলব ডায়রিয়া হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শীতে ঠান্ডাজনিত কারণে শিশুরা রোটা ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যাদের বয়স ৫ বছরের নিচে তাদের ডায়রিয়া হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১'শ এর অধিক আক্রান্ত শিশু ভালো চিকিৎসা সেবা পেতে ভর্তি হচ্ছে চাঁদপুরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে হাসপাতালে গেলে শিশু রোগীদের মেঝেতে শুয়িয়েও চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। 

হাসপাতাল সূত্র জানায়, চলতি মাসের ১ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৩৪ জন শিশুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ২৬১ জন শিশু রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। অন্যত্র রেফার্ড করতে হয়েছে ২০ শিশুকে এবং এখন পর্যন্ত ভর্তি রয়েছে ১১৭ শিশু। এদের বেশিরভাগই ছেলে শিশু।


শহরের আদালত পাড়ার শিশু রোগী রুবেল, হাজীগঞ্জের কামরুল, শাহাতলির ফারুক, কবির, গুয়াখোলার মিশুসহ বেশির ভাগ শিশুর বয়সই হচ্ছে শূন্য থেকে ২ বছর। তাদের অভিভাবকরা বলছেন, 'আমাদের শিশুদের ঠান্ডা, নিমোনিয়া ও জ্বর বুঝতে পেরে ভালো চিকিৎসা পেতে এখানে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু চরম সত্য হলো, এখানে পর্যাপ্ত সিট না থাকায় আমরা শিশু রোগীদের নিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছি। কেননা মেঝের চারপাশে দুর্গন্ধ, ময়লা, বিড়ালের উৎপাত, মশাসহ নাজুক অবস্থা। শুনেছি অপুষ্টিতে আক্রান্ত ৩ শিশু রোগী গেলো কয়েকদিনে এখানে মারা গেছে।'  

এদিকে চাঁদপুর মতলব ডায়রিয়া হাসপাতাল সূত্র থেকে জানা যায়, দিনে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী মতলব ডায়রিয়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকগণ। নতুন বছরের প্রথম দশ দিনে ভর্তি করা হয় ২ হাজার ৩৮০ শিশুকে। শীত মৌসুমে গড়ে দৈনিক ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে। চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রায় ৩৫ টি উপজেলা থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন রোগীরা। দুই বছরের কমবয়সী শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসা শিশুদের অভিভাবকেরা এখানে চিকিৎসা সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট।  

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, 'শীতের রোগ থেকে বাঁচাতে শিশুদেরকে প্রটেকশনে রাখতে হবে। শিশুদের গরম জামা কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। শিশুদেরকে ফল খাওয়াতে হবে।'  

এ বিষয়ে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ. কে. এম. মাহবুবুর রহমান বলেন, 'শীত আসলে প্রতিবছরই ঠান্ডা জনিত শিশু রোগী চিকিৎসা নিতে আমাদের হাসপাতালে আসে। আমাদের এই হাসপাতালে শিশু রোগীর জন্য অনুমোদিত আসন রয়েছে মাত্র ৪২ টি। তবুও রোগীর স্বজনরা এখানে আসলে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। আমরা তাদের শিশুদের যত্ন নিতে ঔষধের পাশাপাশি নানা ধরনের সচেতনতামূলক পরামর্শও দিচ্ছি।' 

এ সম্পর্কিত আরও খবর