অন্যের জমির সীমানা প্রাচীর ভাঙেন মানবাধিকার কর্মী!

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2024-03-05 19:34:06

সাভারের আশুলিয়ার অসহায় চা দোকানি নারীসহ একাধিক মানুষের জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক কথিত মানবাধিকার কর্মী সোহাগ মণ্ডলের বিরুদ্ধে। নামে মানবাধিকার কর্মী হলেও মানুষের অধিকার হরণের একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (০৫ মার্চ) অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানা পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা।

অভিযুক্ত মানবাধিকার কর্মী মো. ইমরান হোসেন সোহাগ ওরফে সোহাগ মন্ডল (৩৮) আশুলিয়ার দূর্গাপুর এলাকার আলমাস আলী মণ্ডলের ছেলে। তিনি আশুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। সামাজিক, পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা নামে একটি সংগঠনের আশুলিয়া থানা কমিটির সহ-সভাপতি তিনি। এছাড়া তার অন্য সহযোগীরা হলেন, একই এলাকার ফরহাদ মন্ডল, নূর ইসলাম বাদল মন্ডল ও সোবহান মণ্ডলসহ অজ্ঞাত কয়েকজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ সপ্তাহে আশুলিয়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ভাঙচুর, জোর খাটিয়ে জমির সীমানা প্রাচীর ভাঙচুর, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

চায়ের দোকান চালিয়ে আশুলিয়ার দূর্গাপুর এলাকায় মাত্র ২ শতাংশ জমি কিনেছিলেন লাইজু আক্তার। জমি দখলের পাঁয়তারা করতেই গত ২৯ ফেব্রুয়ারি লাইজু আক্তারের জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে দেন সোহাগ ও তার সহযোগীরা। পার্শ্ববর্তী জমির মালিক খাদিজা রহমান। তার জমির পরিমাণ ৪ শতাংশ, তার জমিতেও গত ১ মার্চ একইভাবে হানা দিয়েছে সোহাগ। এমনকি এই দুই ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ানোর কারণে স্থানীয় রুবেল মন্ডল নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলতাফ নগর স্কুলের সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে উঠিয়ে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে সাইনবোর্ড উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়কার সিসি ফুটেজে সোহাগ মন্ডল, বাদল মন্ডল ও ফরহাদ মন্ডল সহ বেশ কয়েক ব্যক্তিকে স্পষ্টভাবেই দেখা যায়। তখন তাদের কাছে দা-লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রও দেখা যায়।

ভুক্তভোগী লাইজু আক্তার বলেন, আমরা খুব গরীব মানুষ। ৭ বছর আগে অনেক কষ্টে মাত্র দুই শতাংশ জমি কিনেছি। এখন আমাদের ভয়ভীতি দেখায়, মেরে ফেলারও হুমকি দেয় তারা। আমাদের সামনে দিয়ে দা নিয়ে যাওয়া আসা করে। আমার জমির বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙ্গে দিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।

সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ মন্ডল রানা প্লাজা কান্ডে বিতর্কিত সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য মুরাদ জংয়ের অনুসারী। বেপরোয়া চলাফেরার কারণে প্রায়ই খবরের কাগজে নাম উঠেছে সোহাগ মণ্ডলের। গত বছর ঝুট ব্যবসার দখল নিতে গিয়ে ফ্যাশন গ্লোভ গ্রুপ লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. মঈনুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন সোহাগ মন্ডল। এছাড়া ফিউচার ক্লোথিং নামে পোশাক কারখানার এক নারী পোশাক শ্রমিককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।

বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে তিনি কীভাবে মানবাধিকার সংস্থার সহ-সভাপতি হয়, জানতে কথা হয় সামাজিক, পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার আশুলিয়া থানা কমিটির সভাপতি হাজী মোশাররফ হোসেনের সাথে। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি তো এসব বিষয়ে কিছু জানি না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সোহাগ মন্ডল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমার তো জমি নাই ওখানে। আমি বিচার করতে গিয়েছিলাম। আমি ভাঙচুর করি নাই। আমাকে বিচারে ডেকেছিল। আমি গিয়েছিলাম। দেশে কি কোনো বিচার করা যাবে না?

এবিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর