নরসিংদীর পলাশে কৃষকদের প্রায় শতাধিক একর তিন ফসলী জমির ফসল নষ্ট করে বালু ভরাটের অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। আর এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে চক্রের সদস্যদের হাতে হামলা ও হুমকির শিকার হয়েছেন কৃষরা। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, পলাশ উপজেলার ডাংগায় ইসলামপাড়া ও কাজীরচর গ্রামে রয়েছে বিশালাকৃতির একটি তিন ফসলী মাঠ। যেখানে কৃষকরা ধান, কলা, বেগুন, পাট, সরিষা সহ পর্যায়ক্রমে একই জমিতে তিনটি ফসলি উৎপাদন করতেন।
এমন ফসলী জমির রোপনকৃত ফসল নষ্ট করে বালু দিয়ে ভরাট করছে একটি মহল। এতে কৃষি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা পুরনে বড় ধরনের হুমকি হতে পারে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।
অপর দিকে কৃষকদের অভিযোগ, ইতমধ্যে ১০০ একর ফসলী জমি বালি ভরাট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এই মাঠের একটি সেচপাম্পও জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বালু ভরাটের কাজে জড়িত চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই কৃষকদের তিন ফসলি জমিতে জোড়পূর্বক অবৈধভাবে বালু ভরাট করছে চক্রটি।
এতে করে কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে বালু ভরাটের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের উপর একাধিকবার বর্বরোচিত হামলা করা হয়। হামলা করে কৃষকদের কয়েক দফায় মারধরও করা হয়। এছাড়া প্রাণনাশের হুমকি দেয়ায় অনেকেই বাড়িছাড়া হয়েছেন। এতে করে ওই এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি বালু ভরাটকারী চক্রের এক সদস্য অপর পক্ষের হামলায় মারা যাওয়ায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এই ঘটনায় পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: শহীদুল্লাহ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকে দুই দিন সময় নেন। পরবর্তীতে দুই দিন পর বক্তব্যের জন্য গেলে সাংবাদিকদের অফিসে বসিয়ে রেখে কথা না বলেই বিদায় করে দেন।
পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার জানান, পলাশের ডাংগা এলাকার তিন ফসলীর জন্য সব থেকে বড় মাঠ এটি। আর এ মাঠ ভরাট হয়ে গেলে কৃষি উৎপাদনে বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হবে কৃষি বিভাগ। তাই মাঠে বালু ভরাট বন্ধ করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে অবগত করা হয়েছে।
কৃষকরা জানান, ডাংগা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম সেলিম এর নেতৃত্বে ডাংগা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য কৌশিক আহমেদ নয়নের নেতৃত্বে কৃষকের অনুমতি ছাড়াই দিনের পর দিন অবাধে বালি দিয়ে কৃষি জমি ভরাট করছে। কেউ জমিতে নামতে গেলেই তাকে মারধর করা হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। এছাড়া কৃষকরা তাদের নিজ জমিতে নামলে তাদের উপর হামলা করে পিটুনিয়ে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার ও অভিযোগ করেন তারা।
স্থানীয় ডাংগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবের-উল-হাই কৃষকদের জমির নায্য মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে জমি নেয়ার পরামর্শ দিয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া সাপেক্ষে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
কৃষকদের এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবী করে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য কৌশিক আহমেদ নয়ন জানান, এখানে শিল্পকারখানা করার জন্য কিছু জমি ক্রয় করা হয়েছে, কিছু বায়না করা হয়েছে। আর কিছু জমি বাকি রয়েছে যা কৃষকরা দেবে বলে এখানে বালি ভরাট করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে কিছু দুষ্ট লোক কৃষকদের লেলিয়ে দিয়ে একটি অরাজকতা সৃষ্টি করছে।
জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, তিন ফসলী জমিতে কোন শিল্প নয় বলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা রয়েছে। তাই কৃষি জমিতে কোন শিল্প করা যাবেনা। এছাড়া অন্যের জমিতে কেউ বালি ফেলবে এটা ফৌজদারী অপরাধ। তাই এই কৃষি জমি নিয়ে অরাজকতা দেখা দিলে কৃষকরা না করলেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হবে। তাই এই কৃষি জমি নিরাপদ রাখতে দ্রুত তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।