এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণের জন্য শতবর্ষীসহ ৪৬টি গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এরই মধ্যে নগরীর টাইগারপাস ও সিআরবি এলাকার এসব গাছ কাটার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। তবে কোনোভাবেই গাছগুলো কাটতে দিতে রাজি নন পরিবেশকর্মীরা।
সোমবার (১ এপ্রিল) দুপরে গাছ রক্ষায় ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পরিবেশকর্মীরা। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত গাছ রক্ষার দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে তারা শতবর্ষী একটি গাছের চারপাশে অবস্থান নেন তারা।
'সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন' নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এ সময় সবার হাতে ছিল 'উন্নয়নের করাত থেকে গাছেদের মুক্তি দাও', 'বেঁচে থাকা গাছ আপনার কী ক্ষতি করে', 'গাছ কাটার আগে আমাদের কাটো'।
চট্টগ্রাম নগরের দ্বিতল সড়ক হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কের গাছগুলো রক্ষার এই আন্দোলনে বক্তব্য দেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান। তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'যারা এসব সিদ্ধান্ত নেন তারা বিভিন্ন স্বার্থে কাজ করেন। আমরা বলছি আত্মঘাতী। সবার যদি এই আত্মঘাতী মনে মতো, তাহলে এ কাজটা করতে পারতাম না। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এমন সব লোককে উপরে বসান, যাদের কোন ট্রেনিং নেই। এই গাছগুলো থেকে নানা রকম সুবিধা পেয়ে থাকি এটা নিয়ে তারা অবহিত নন। প্রকৃতি থেকে যে আমরা নানা সুবিধা পাই, এসব নিয়ে তাদের জানাশোনা, জ্ঞান কিছু নেই। এসব জায়গায় যারা বসেন তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।'
সিডিএ চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৪ নভেম্বর ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন। মূল অংশের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ শেষ না হওয়ায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।
মূল এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি ওঠা-নামার জন্য ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে দুটি আছে নগরের টাইগারপাসে। দুটি র্যাম্পের মধ্যে টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কে গাড়ি ওঠার র্যাম্প নির্মাণ করা হবে। সবুজে ঘেরা অনন্য এই সড়কের একটি অংশ গেছে পাহাড় ঘেঁষে ওপর দিয়ে। আরেকটি অংশ নিচে। মধ্যবর্তী পাহাড়ি ঢালে রয়েছে ছোট-বড় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছে রয়েছে নানা প্রজাতির পাখির বাসা। এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প (গাড়ি ওঠার পথ) নির্মাণ করতে গাছগুলো কাটতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ইতিমধ্যে গাছগুলোতে লাল ও সাদা কালি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।