বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যায় জড়িত ছাত্রদলের সাবেক নেতা গ্রেফতার

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-04-27 15:06:30

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন এলাকায় মহাসমাবেশের নামে নারকীয় তাণ্ডব চালায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এই আন্দোলন সফল করতে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ওইদিন রাতে ডেমরা এলাকা অছিম পরিবহন নামের একটি বাসে আগুন দিয়ে ঘুমন্ত হেলপারকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ছাত্রদলের সাবেক নেতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান (অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার) মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- ছাত্রদলের সাবেক নেতা নুরুল ইসলাম মনির ওরফে মনির মুন্সি (৩৭), নারায়ণগঞ্জের যুবদল নেতা সাহেদ আহমেদ (৩৮) ও বিএনপি কর্মী মাহাবুবুর রহমান সোহাগ (৩৩)। সোহাগ মনির মুন্সির ব্যক্তিগত গাড়িচালক।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বানচালের উদ্দেশে রাজধানীর পল্টন এলাকায় নারকীয় তাণ্ডব চালায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা ওইদিন মহাসমাবেশের নামে রমনায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার মত জঘন্য কাজসহ অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ অক্টোবর ভোরবেলায় ডেমরা থানার এলাকায় পার্কিং করে রাখা অছিম পরিবহনের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে ওই বাসে ঘুমিয়ে থাকা হেলপার মো. নাইম (২২) আগুনে পুড়ে মারা যায় এবং অপর হেলপার মো. রবিউল (২৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করে সিটিটিসির স্পেশাল একশন গ্রুপের এন্টি ইলিগাল আর্মস এন্ড ক্যানাইন টিম।

তদন্তভার গ্রহণের পর ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সিটিটিসি। উক্ত ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি সনাক্ত করতে সক্ষম হয়, যা ওইদিন অগ্নিসংযোগে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই গাড়ির সূত্র ধরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অগ্নি সংযোগকারী ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার এবং ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করা হয়।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, ২৮ অক্টোবরের নাশকতা ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য মনির মুন্সিকে নির্দেশনা দেয় দলের হাইকমান্ড। নাশকতার মাত্রা আরও বাড়ানো এবং এমন কোন ঘটনা ঘটানো যাতে করে জনমনে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তারই অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজনকে অগ্নিসংযোগের জন্য নিয়োগ দেয় মনির। সে নিজে বড় একটি ঘটনা ঘটানোর জন্য নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিব এবং তার বন্ধু সাহেদ আহমেদকে ডেকে নেয়। এবং পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডেমরার দেইল্লা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় রাত ২টার পর বেশ কয়েকবার গাড়ি দিয়ে ঘুরে ঘুরে রেকি করে এবং দেখতে থাকে কোন জায়গাটা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতামুক্ত। অবশেষে তারা কাঙ্ক্ষিত টার্গেট নিশ্চিত করে বড়ভাঙ্গা মার্কেটে চলে যায়। সেখান থেকে ২ লিটারের পানির বোতলে পেট্রোল সংগ্রহ করে রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। নিরাপদ দূরত্বে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার মাহাবুবুর রহমান সোহাগকে গাড়িতে রেখে মনির মুন্সি ও সাহেদ পেট্রোলের বোতল নিয়ে রাস্তার পাশে পার্ক কররে রাখা অছিম পরিবহনে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিমিষেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে তারা দুইজন দৌড়ে গাড়িতে এসে উঠে। এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।

নাশকতার নির্দেশদাতাদের পরিচয় জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা সবার নাম পরিচয় পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। গ্রেফতার শেষে সবাইকে জানানো হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর