যৌবন হারিয়েছে জমিদারের গোলপুকুর

ময়মনসিংহ, জাতীয়

রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ), বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 04:23:41

চারপাশে দুর্বা ঘাসের সবুজ চাদর। ফুটে আছে বাহারি রঙের ফুল। তার মাঝে গোলাকৃতির পানির ফোয়ারা। সেখানে ভাসছে লাল শাপলা। উদোম বাতাসে দোল খাচ্ছে ফোয়ারার পানি। ভিজে উঠছে শাপলার পাপড়িগুলো।

সংস্কারের পর অপূর্ব নির্মাণশৈলী আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই দৃশ্য গৌরীপুর জমিদারদের স্মৃতিচিহ্ন গোলপুকুরকে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে গোলপুকুরের এই আকর্ষণ দর্শনার্থীদের কাছে বেশিদিন স্থায়িত্ব পায়নি।

স্থানীয়রা জানান, একযুগ আগে সংস্কারের পর গোলপুকুর তার যৌবন ফিরে পেয়েছিল। কিন্তু অযত্ন আর অবহেলায় গোলপুকুর আবারো তার ফিরে পাওয়া যৌবন হারিয়ে ফেলেছে। মুক্ত প্রকৃতির এই স্থানটিকে এখন তরুণ-তরুণীরা বেছে নিয়েছে একান্তে সময় কাটানোর জন্য। সন্ধ্যা হলে আনাগোনা দেখা যায় ভ্রাম্যমাণ মাদকসেবীদেরও। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ‘উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে অযথা ঘোরাফেরা নিষেধ’ এই মর্মে সাইনবোর্ড টানিয়েই শুধু দায় সেরেছে।

জানা গেছে, গৌরীপুর উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের ভেতর গোলপুকুরের অবস্থান। শতবছর পূর্বে গৌরীপুরের তৎকালীন জমিদার বজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী জমিদারবাড়ির নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সাগরদীঘির পূর্বে পাকা শান বাঁধানো সিঁড়িযুক্ত গোলপুকুর নির্মাণ করেন। কিন্তু জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর গোলপুকুর অযত্ন অবহেলায় পড়ে থেকে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল।

২০০৭ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইহসানুল হক গোলপুকুরটি সংস্কার করেন। এ সময় পুকুরের শান বাঁধানো ঘাটের সিঁড়ি সংস্কার করে সুন্দর পানির ফোয়ারা নির্মাণ করা হয়। পানি ধরে রাখা ও বের হয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয় সেচের। আলোকসজ্জার পাশাপাশি গোলপুকুরের চারপাশে লাগানো হয় দুর্বা ঘাস ও হরেক রকম ফুলের চারা। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রোপণ করা হয় আরও বিভিন্ন রকম গাছ। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য ইট দিয়ে ঘাটের আদলে বেঞ্চ স্থাপন করা হয়।

এদিকে সংস্কারের পর দ্রুত সময়েই গোলপুকুর দর্শনার্থী ও ভ্রমণপিপাসুদের বিনোদনের স্থানে পরিণত হয়। দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষজন ছুটে আসত গোলপুকুর পাড়ে অবকাশ যাপনের জন্য। সবুজ গাছ-পালার নির্মল বাতাসে জুড়িয়ে নিত প্রাণ। কিন্তু সংস্কারের নতুনত্ব কাটতে না কাটতেই কয়েক বছরের মাথায় গোলপুকুর তার আকর্ষণ হারাতে শুরু করে।

শনিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোলপুকুরে পানি নেই। পুকুরের তলায় দুর্বা ঘাসের সবুজ চাদর। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। পুকুরের সিঁড়ির রঙ উঠে যাচ্ছে, খসে পড়ছে পলেস্তারা। ফুলের গাছগুলোও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

বিশিষ্ট লেখক ও প্রাবন্ধিক রণজিৎ কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘জমিদার বজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর উদ্যোগে নির্মিত শতবর্ষী পুরানো গোলপুকুরের অপূর্ব নির্মাণশৈলী এখনো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটি তার সৌন্দর্য হারাতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করছি।’

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম বার্তা২৪.কমকে জানান, ঐতিহাসিক নিদর্শন গোলপুকুরের হারানো সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও দর্শনার্থীদের বিনোদন সুবিধা বাড়াতে এখানে সেচ ব্যবস্থা চালু, ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ ও দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে আর্থিক সমস্যার কারণে কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর