ডাকাতি করতে গিয়ে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৪

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-05-20 12:24:13

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ডাকাতিকালে মূল্যবান জিনিসপত্র না পাওয়ায় কিশোরীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আব্দুল্লাহ (২৪), তার সহযোগী মতিন (৩৫), চাঁন মিয়া (২৮) ও আয়নাল (২৫)। গতকাল রোববার রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব ১১ অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় ভুক্তভোগীর মোবাইলসহ ১টি দেশীয় তৈরী ওয়ান শুটার গান, ১টি শাবল, ১টি দা, ২টি রামদা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সিএনজি উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, এই চক্রটি একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। তারা দিনের বেলায় বিভিন্ন পেশায় থেকে নির্দিষ্ট বাড়ি রেকি করেন। পরে সুযোগ বুঝে ঐ সকল বাড়িতে ডাকাতি করত। গত দুই বছর ধরে এই চক্রটি বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ডাকাতি করে আসছিল। তারা কোন মূল্যবান জিনিসপত্র না পেলে ধর্ষণ-খুনসহ বাসাবাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট করতেন।

সোমবার (২০ মে) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম এসব তথ্য জানান।


তিনি বলেন, গত ১৫ মে রাত আড়াইটায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকায় ডাকাতি কার্যক্রমকালে কোন মূল্যবান জিনিসপত্র না পেয়ে ১৭ বছরের এক কিশোরীকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। ওই ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আড়াইহাজার থানায় মামলা করলে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর একটি অভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ওই গণধর্ষণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন।

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্র এবং চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ। এই চক্রে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লার নের্তৃত্বে তারা গত ২ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল বলে জানা যায়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরাফাত ইসলাম বলেন, গ্রেফতারকৃতরা গত ১৫ মে রাত আড়াইটার দিকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ভিকটিমের বাড়িতে যায়। সেসময় গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ ও গ্রেফতারকৃত মতিন ঘরের জানালা ভেঙে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে। ভিকটিম ও তার মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলে তারা ভয়ে চিৎকার করলে গ্রেফতারকৃতরা তাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা ঘরের দরজা খুলে দিলে গ্রেফতারকৃত চাঁন মিয়া ও গ্রেফতারকৃত আয়নালসহ অন্যান্য সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্রসহ ঘরে প্রবেশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমের মা সহ ঘরে উপস্থিত সকলের হাত,পা ও মুখ বেঁধে ফেলে।

পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা ঘরের ভিতর মূল্যবান জিনিসপত্র না পেয়ে ক্ষোভে ভিকটিমকে হাত-পা বাধাঁ অবস্থায় তাদের বাড়ির পাশে একটি ফাঁকা ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিমের মুখ ওড়না দিয়ে পেচিয়ে জোরপূর্বক পালাক্রমে গণধর্ষণ করে ভিকটিমকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এসময় গ্রেফতারকৃতরা এই ঘটনা সম্পর্কে কাউকে জানালে ভিকটিম ও তার পরিবারকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেন।


র‍্যাব জানান, গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ এই ডাকাত চক্রের মূলহোতা। সে পূর্বে একটি স্পিনিং মিলে চাকুরির সময় থেকে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ডাকাত চক্রটি গড়ে তুলে। সে ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জের ভুলতা-গাউসিয়া এলাকার বাসের হেলপার ও রিক্সা চালাত।

গ্রেফতারকৃত মতিন গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহর অন্যতম সহযোগী। সে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। সে ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে সিএনজি চালাত। সিএনজি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির জন্য টার্গেট নির্ধারণ করে ডাকাতির পরিকল্পনা গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহকে প্রদান করতো। এছাড়াও সে তার সিএনজি দিয়ে ডাকাতির পূর্বে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যেত এবং ডাকাতি শেষে চক্রের সদস্যদের সুবিধাজনক স্থানে দ্রুত পৌঁছে দিত। তার বিরুদ্ধে নরসিংদীর মাধবদী থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত চাঁন মিয়া ও আয়নাল ডাকাত চক্রের অন্যতম সদস্য। তারা ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে যথাক্রমে বাস ও সিএনজি চালাত। তারা গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহর নের্তৃত্বে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতো। গ্রেফতারকৃত চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও চুরি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আয়নাল এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ সংক্রান্ত ১টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া গ্রেফতারকৃ চারজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় র‍্যাব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর