ঘূর্ণিঝড় 'রেমালে'র প্রভাবে উপকূলের বাঁধে ভাঙন আতঙ্ক

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক করেসপনডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা | 2024-05-26 10:43:55

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূলে বইছে জড়ো হাওয়া। বাড়তে শুরু করেছে জোয়ারের পানি। এ ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে খুলনার দাকোপ, কয়রাসহ উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়লে নড়বড়ে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলীয় সাতক্ষীরা, খুলনা এবং বাগেরহাট এই তিন জেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে (সাইক্লোন শেল্টারে) নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। খুলনা জেলার ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র ও তিনটি মুজিবকেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাগেরহাট জেলায় ৩৫৯টি ও সাতক্ষীরা জেলায় ১৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জানা যায়, খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটায় প্রায় ২২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে কয়রা মহারাজপুর, কাশিয়াবাদ মঠেরকোনা মঠবাড়ি দশহালিয়ায় দুই কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে গাববুনিয়া বেড়িবাঁধের মতো মদিনাবাদ লঞ্চঘাট থেকে গোবরা, হরিণখোলা-ঘাটাখালী, মহারাজপুর, কাশিয়াবাদ, দশহালিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ নাজুক অবস্থায় রয়েছে।

কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ শাহনেওয়াজ শিকারী জানান, আগে বাঁধের নিচে ৬০ ফুট পর্যন্ত চওড়া ছিল। ঢালের মতো বাঁধের ওপরের অংশে ছিল ১০-১২ ফুট। এখন ঠিকাদার-ওয়াপদা (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বাঁধের নিচের মাটি স্কেভেটর দিয়ে কেটে ওপরে সংস্কার করা হয়। এতে বাঁধের ওপরে ১০-১২ ফুট ঠিক থাকলেও নিচের দিকে মাটি কমে যাওয়ায় বাঁধ দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে বাঁধ সংস্কারের কিছুদিনের মধ্যেই পানির তোড়ে সহজে বাঁধ ভেঙে যায়।

এদিকে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ঝোড়ো বাতাসে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে উপকূলে। আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি আজ সন্ধ্যার পর সুন্দরবন, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও তৎসংলগ্ন কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড- বিভাগ-২’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম জানান, উপকূলীয় এলাকায় বন্যা ব্যবস্থাপনায় বাঁধ মেরামত ও টেকসই করতে নিয়মিত সংস্কার কাজ চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোথাও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের জন্য জিও ব্যাগ, সিনথেটিক ব্যাগ মজুদ রাখা হয়েছে।

জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ থাকতে পারবেন। ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল রাত পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখা যায়নি কোথাও। তবে আজ সকাল থেকে কিছু মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে দেখা গেছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কয়রা উপজেলার এক স্বেচ্ছাসেবক মোঃ আবিয়ার রহমান জানান, এ অঞ্চলে সাধারণত জলোচ্ছ্বাস বেশি হয়। পানি বাড়লে ওই সময় বাড়িতে কেউ থাকলে তারা মালামাল সরিয়ে উঁচু স্থানে রাখতে পারেন। এছাড়া এ এলাকার অনেক মানুষ মনে করেন যে, অনেক সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস আসবে বললেও শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না। ফলে এবারও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতি হবে না।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার, ওষুধ, ঢেউটিন ও নগদ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর