চট্টগ্রামের ছয় উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে ১২ হাজার মানুষ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2024-05-26 22:55:57

বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল থেকে বাচঁতে উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে আসছেন। শনিবার (২৫ মে) রাত থেকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের ছয় উপজেলার ৪৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১২ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে। এছাড়া উপকূলীয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৯শ’ গবাদিপশু নিয়ে আসা হয়েছে।

রোববার (২৬ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বার্তা২৪.কম-কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতর জানায়, চট্টগ্রামে ১০৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরমধ্যে সন্দ্বীপ উপজেলায় ১৬২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে ১ হাজার ৯৫৫ জন পুরুষ, ২ হাজার ৮৫ জন মহিলা, ৯৬৬ জন শিশু ও ৫ জন প্রতিবন্ধী আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া বাঁশখালী উপজেলায় ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে পুরুষ ১ হাজার ৯১৫ জন, মহিলা ১ হাজার ৯৬৮ জন, শিশু ৪২০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। আনোয়ারা উপজেলায় ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে পুরুষ ২৯৩ জন, মহিলা ২৮৩ জন ও শিশু ১১৭ জন আশ্রয় নিয়েছেন।


মিরসরাই উপজেলায় ৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে পুরুষ ৩৯৭ জন, মহিলা ২০৫ জন, শিশু ৪৫ জন ও একজন প্রতিবন্ধী আশ্রয় নিয়েছেন। সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে পুরুষ ৪৫৭ জন, মহিলা ৩৯৭ জন ও ১৩৫ জন শিশু আশ্রয় নিয়েছেন। তাছাড়াও কর্নফুলী উপজেলায় ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে পুরুষ ৩৫ জন, মহিলা ৪০ জন ও ২৫ জন শিশু আশ্রয় নিতে এসেছেন।

আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি জেলা সিভিল সার্জন ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০০টি, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি, আর্বান ডিসপেনসারি ৯টি এবং ৫টি জেনারেল হাসপাতালসহ মোট ২৯৫টি মেডিকেল টিম গঠন করেছেন। মজুত রাখা হয়েছে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য প্রায় তিন লাখ ট্যাবলেট ও চার লাখ খাবার স্যালাইন।


চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, শনিবার রাত থেকে রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত আমরা মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, কর্ণফুলী ও বাঁশখালী- এ ছয় উপজেলায় ৪৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে উপকূলবর্তী এলাকার শিশু ও প্রতিবন্ধীসহ ১১ হাজার ৮০৬ জন নারী-পুরুষকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে সক্ষম হয়েছি। একই সঙ্গে ৮৯৬টি গবাদিপশুও আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। সকলে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে নগরের এখনও কাউকে সেভাবে জোরপূর্বক আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। যারা সাগর তীরবর্তী এলাকায় ও পাহাড়ে বসবাস করছেন, তাদের আমরা সরে যাওয়ার অনুরোধ করছি। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও কর্ণফুলী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে চট্টগ্রামে ব্যাপক বর্ষণ ও পূর্ণিমার কারণে তীব্র জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা থাকায় উপকূলবর্তী ও পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে এক জরুরি প্রস্তুতি সভায় মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোকে আশ্রয়কেন্দ্রে হিসেবে ব্যবহার করবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। একই সঙ্গে চসিকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সোমবার বন্ধ ঘোষণা দেনে তিনি।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে মেয়র বলেন, শনিবার সকালেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থানরত জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করার নির্দেশ দিয়েছি। দামপাড়াস্থ চসিকের বিদ্যুৎ উপ-বিভাগস্থ কার্যালয়ে খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিজ-নিজ ওয়ার্ডের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থানরত জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে তদারক করতে নির্দেশ দিয়েছি।

'চসিকের সবগুলো বিভাগ দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সক্রিয় আছে। এছাড়া রেড ক্রিসেন্টও সহযোগিতা করছে। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সাথেও যোগাযোগ করব যাতে ঝড়ে গাছ পড়লে বা দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে কোন সংস্থার গাফিলতির জন্য মানুষ কষ্ট না পায়৷'

পাহাড়ের পাদদেশসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা নাগরিকদের সরিয়ে নিতে কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়ে মেয়র বলেন, উপকূলীয় এলাকা ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে নাগরিকদের সরিয়ে নিতে হবে৷ প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে হবে৷ ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের প্রতি আহ্বান আপনারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান৷

এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন জেলে পাড়াসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর