অটোরিকশা ছিনতাই করতে চালককে হত্যা, ঘাতকসহ গ্রেফতার ৩

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-05-27 14:43:45

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইল এলাকার গ্রীন মডেল টাউনের একটি প্লট থেকে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় নয়ন নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ১৮ মে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশ মরদেহ তথ্য জানায় স্থানীয়রা। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার থানায় মামলা করলে তদন্তে নেমে হত্যায় জড়িত ঘাতকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো.দীন ইসলাম (২০), মমিনুল হক ওরফে মকবুল (৩০) ও মো. আজিজুল হক (৩০)। তাদের সবার বাড়ি জামালপুর জেলায়।

আসামিদের তথ্যের ভিত্তিতে ভাঙ্গারির দোকান থেকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (২৭ মে) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির ওয়ারি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইকবাল হোসাইন।

তিনি বলেন, গত ১৮মে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে স্থানীয়রা যাত্রাবাড়ী থানায় ফোন করে জানায়, মাতুয়াইল এলাকার গ্রীন মডেল টাউনের একটি প্লটে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় এক ব্যক্তির মরদেহ পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পঁচাগলা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিহতের পরিচয় উদঘাটন করা হয়। নিহতের পরিবার জানায়, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম মো. নয়ন (২০)। পেশায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক। গত ১৪ তারিখ ভাড়ায় চালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হওয়ার পরে আর বাসায় ফেরে নি। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল নয়ন। এই ঘটনায় নিহতের মা রিনা বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলার তদন্তে নামে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।

ডিসি ইকবাল জানান, এর আগে অটোরিকশা চালক নয়ন নিখোঁজের দিন সেই রিকশার বডি ও হুডসহ দুই রিকশা যাত্রীকে আটক করে যাত্রাবাড়ী থানার টহল পুলিশ। আটক যাত্রীরা ময়লার স্তূপের মধ্যে এগুলো কুড়িয়ে পেয়েছেন। পরবর্তীতে রিকশার বডিতে থাকা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে রিকশার মালিককে ডাকা হয়। তিনি এসে রিকশা হুড ও বডি নিয়ে যান। তবে তিনি চালক নয়নকে না পাওয়া পর্যন্ত মামলা করতে রাজি হননি।

এদিকে ঘটনার চারদিন পরে মরদেহ উদ্ধার ও এর আগে রিকশার বডি ও হুড উদ্ধার হওয়ায় হত্যায় জড়িদের ধরতে মাঠে নামে পুলিশ। পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার আজিজুল হকের দোকান থেকে অটোরিকশা ব্যাটারিসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দীন ইসলাম ও মকবুলকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে ইকবাল হোসাইন জানান, গত ১৪মে গ্রেফতারকৃত মকবুল এবং পলাতক মিজান ওরফে নিজামসহ কয়েকজন মিলে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯ টায় গ্রীন মডেল টাউন যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রাবাড়ী থানার কাজলা থেকে ৮০ টাকা ভাড়া ঠিক করে নয়নের রিকশায় ওঠে। রিকশাটি গ্রীন মডেল টাউনে পৌছিলে মিজান চালক নয়নের গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরে তাকে নিচে ফেলে। তখন দীন ইসলাম রশি দিয়ে নয়নের দুইপা বেঁধে ফেলে। মকবুল দুই হাত বাঁধে। পরবর্তীতে মুখে গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পার্শ্ববর্তী ছনক্ষেতের ভিতরে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে সবাই মিলে রিকশাটি নিয়ে ধলপুরে চলে আসে। ধলপুরে এসে ছিনতাইকারীরা রিকশার ব্যাটারি, মোটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আজিজুল হকের কাছে মাত্র ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।

গ্রেফতার দীন ইসলাম এবং ভাঙ্গারী দোকানদার আজিজুল হক ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর