ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলছেন গত ৫০ বছরে এমন জলোচ্ছ্বাস দেখেননি। উপকূলীয় জেলার অনেকে লিখেছেন তাদের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে, যা তাদের জীবদ্দশায় কখনও ঘটেনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক রেজাউল করিম বাবুল তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ঝালকাঠির রাজাপুরে আমাদের গ্রামের বাড়ির আঙিনায় দুই ফুট পানি। যা গত ৫০ বছরেও হয়নি।
সিনিয়র সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সম্রাট ফেসবুকে পোস্টে দুটি ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, স্বরূপকাঠিতে আমার বাংলোর পার্কিং এরিয়াসহ বাগান ডুবে গেছে। পেছনের কাঠের চুলায় রান্না করার জন্য তৈরি এক্সট্রা ঘরটি আর ২/৩ ইঞ্চি পানি বাড়লেই ডুবে যাবে। আমার জীবদ্দশায় এতো বেশি পানি হয়নি কখনো। হে আল্লাহ, উপকূলের মানুষগুলোকে রক্ষা করুন।
সাংবাদিক নাদিম নেওয়াজ লিখেছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে স্বরূপকাঠিতে তীব্র জলোচ্ছ্বাস, জীবনে কখনও আমাদের ঘরে পানি উঠতে দেখিনি, স্বরূপকাঠি বাজারেও প্রায় হাঁটু সমান পানি দেখিনি। আরেক পোস্টে দুটি ভিডিও শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে স্বরূপকাঠিতে বাতাসের তীব্রতা কম থাকায় এখন পর্যন্ত খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে ভোরের জোয়ারের সাথে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র জলোচ্ছ্বাস। যা স্বরূপকাঠির জন্য রেকর্ড। আমি আমার জীবদ্দশায় এতো উচ্চতার পানি কখনও দেখিনি। এই হলো আমাদের বাড়ির চারপাশের সর্বশেষ অবস্থা।
আরও অনেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে জানিয়েছেন তাদের জীবদ্দশায় এমন জলোচ্ছ্বাস দেখেননি। আবার অনেক এলাকায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। খুলনার কয়রায় জলোচ্ছ্বাসে ৩টি জায়গার বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে শতাধিক চিংড়ির ঘের। ভেঙে গেছে মাটির তৈরি কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। রাতভর ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
কয়রার মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, রোববার (২৬ মে) মধ্য রাতের দিকে জোয়ারের চাপে এ ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে অন্তত দুটি গ্রাম এবং কয়েকশ চিংড়ির ঘের তলিয়ে গেছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ১৩টি বসতবাড়ি।
অন্যদিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে সোমবার (২৭ মে) দুপুর পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে ৭ জনের মৃত্যূর খবর পাওয়া গেছে। পটুয়াখালীতে উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে একজন এবং সাতক্ষীরায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে একজন। মোংলায় ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ রয়েছে শিশুসহ দুইজন। এছাড়াও বরিশাল, ভোলা ও চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ৫ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রায় সোয়া কোটি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গ্রাহকের পরিবারের সদস্য সংখ্যা গড়ে ৪ জন করে হলে প্রায় সাড়ে ৪ কোটির মতো লোক সংখ্যা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সোমবার (২৭ মে) সকাল ১০টার পর থেকে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, লাইনগুলো পরীক্ষা করে দেখে তারপর চালু করতে হচ্ছে। অনেক এলাকায় লাইনে গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে, কোথাও কোথাও খুঁটি উপড়ে গেছে।