তামাকের ব্যয় পেনশন স্কিমে যুক্ত হলে অর্থনীতি শক্তিশালী হবে: গবেষণা

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম | 2024-05-27 17:07:10

তামাক জাতীয় দ্রব্যের পেছনে ব্যায়ের অর্থ পেনশন স্কিমে যুক্ত হলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে জানিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সংস্থা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮-৩০ বছর বয়সী তরুণরা তামাকের পিছনে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। যা দেশের বার্ষিক বাজেটের ৭ শতাংশের বেশি। দেশে বর্তমানে প্রতি আটজনের একজন (২ কোটি ১০ লাখ) পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে না। তামাকজাত দ্রব্যের কর ও মূল্য উচ্চহারে বৃদ্ধি করে এই বাড়তি রাজস্ব জনগণের জন্য পুষ্টিকর খাবারে ভর্তুকিতে ব্যয় করা হলে ২৭ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। এছাড়া তরুণদেরকে তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা গেলে তাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং দেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন হবে।

সোমবার (২৭ মে) রাজধানীর বাংলামোটর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত 'যুবকদের মাঝে তামাক ব্যবহার হ্রাস জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও পেনশন কর্মসূচি জোরদার' শীর্ষক সভায় এসব জানানো হয়।

উল্লেখ্য, তরুণদের সঞ্চয় মানসিকতা এবং তামাক ব্যবহারের ফলে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মূল্যায়ন করতে এবং কার্যকর সুপারিশ পেশ করার জন্য ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) এর উদ্যোগে ঢাকা শহরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১৮-৩০ বছর বয়সী তরুণদের উপর একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে তরুণদের মাঝে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। তামাক নিয়ন্ত্রণের অর্থ স্বাস্থ্য-বীমা ও ‍শিক্ষা বিমায় ব্যবহার করলে দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে তরুণদেরকে সম্পৃক্ত করা সহজ হবে।

এছাড়া তিনি তামাকজাত দ্রব্যের উপর পেনশান সারচার্জ যুক্ত করার বিষয়ে আলোকপাত করেন।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক বলেন, তরুণ প্রজন্মকে স্থায়ীত্বশীল জনশক্তিকে রুপান্তরিত করতে তামাক, কোমল পানীয়সহ সকল অস্বাস্থ্যকর দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এই লক্ষ্যে গবেষণার আলোকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।

আইনজীবী ও নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তরুণদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তাদের মধ্যে সঞ্চয়ী মানসিকতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অংশগ্রহণ জরুরি। এছাড়া সকল অস্বাস্থ্যকর খাবারের উপর উচ্চহারে কর বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। পরিশেষে তিনি স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অনুরোধ জানান। 

সভায় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের উপর ৩০ শতাংশ কর বৃদ্ধি করলে এই অর্থ সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়কৃত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে একটি বড় ভূমিকা রাখবে। তামাকের ব্যবহার কমিয়ে এই অর্থ জাতীয় পেনশন স্কিমে ব্যবহারের জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়াও তারা ধূমপায়ীদের জন্য বিভিন্ন সরকারী সুযোগ সুবিধা হ্রাসের দাবি জানান। 

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে স্বাস্থ্যকে শুধুমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্রিক না করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। পরিশেষে তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং তরুণদেরকে জাতীয় পেনশন স্কিম গ্রহণে উৎসাহী করতে প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অফ প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর