রাজধানীর প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো উদ্ধার ও রক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে ভূমিসেবা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
সাবিরুল ইসলাম বলেন, রাজধানী ও আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬১টি পুকুর উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া হাজার খানেক পুকুর ও জলাশয় চিহ্নিত করা হয়েছে। শীঘ্রই রাজউক ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে নিয়ে ভরাট ও দখলকৃত প্রাকৃতিক জলাশয় এবং পুকুরগুলো উদ্ধার অভিযানে নামা হবে। এছাড়া খাল ও নদী দূষণের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
ভূমি অফিসে দালাল নির্মূলের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে সবখানে দালাল শ্রেণির লোকজনের আধিপত্য ছিল। বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও ভূমি নামজারিসহ নানা সেক্টরে দালাল ছিল। কিন্তু ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে দালাল সবখানে কমে এসেছে। এখন নামজারি আবেদন, পর্চা, মৌজার ম্যাপ অনলাইনে আবেদন করা যাচ্ছে। নামজারির ফি মোবাইল ব্যাংকিং যেমন- বিকাশ, নগদ, রকেটসহ নানা মাধ্যমে দেয়া যাচ্ছে। এতে করে দালালের দৌরাত্ম কমে গেছে। এখনো পুরোপুরি যে শেষ হয়ে গেছে এমন বলব না। তবে দালালচক্রের বিরুদ্ধে যদি কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে আর এই চক্রে যদি আমাদের অফিসের কেউ জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
ভূমি সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি জানান, প্রত্যেক জমির মালিকের মোবাইল নম্বর সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রত্যেক ভূমির মালিক ঘরে বসেই খাজনা, ই-নামজারি, পর্চাসহ যাবতীয় ভূমি সেবা নিতে পারবেন। এজন্য প্রত্যেক ভূমি অফিসে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী আবেদন করার জন্য আলাদা লোকবল নিযুক্ত করা হয়েছে, যেন কোনো ভূমির মালিক দালালের হয়রানির শিকার না হন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ঢাকা বিভাগের ৮৯টি উপজেলার মধ্যে ৭৪টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হয়েছে। ঢাকা বিভাগে ৫ম পর্যায়ের ২য় ধাপে ভূমিহীন ৫৮৩ পরিবার সরকারি ঘর পাবে। আগামী ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন।
তিনি বলেন, প্রথম বারের মতো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৮টি খাস পুকুর সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ৩২,২১২টি পরিবারকে একক গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে এবং তাদের জমির নামজারি ও কবুলিয়ত হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকা বিভাগে ২৮ দিনে ই-নামজারীর মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এবং শতভাগ হোল্ডিং অনলাইনে এন্ট্রি করা হয়েছে। এর ফলে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের হার ছিল ৭৮.৬০ শতাংশ। গত দুই বছরে প্রায় ২৫ একর নদীর দখলকৃত জমি উদ্ধার করা হয়েছে। ভূমি আইনের সংস্কার এবং প্রযুক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান আইন ও বিধির সংস্কার, নতুন আইন প্রণয়ন এবং সেবা সহজীকরণে নতুন পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সারাদেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্বে ১০৪৩টি আধুনিক ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় পর্বে আরও ১৩৩৩টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবনের নির্মাণ কার্যক্রম চলমান আছে। ই-রেজিস্ট্রেশন ও ডিজিটাল ভূমিসেবা সিস্টেমের আন্তঃসংযোগ ঘটানোর জন্য ১৭টি উপজেলায় পাইলট ভিত্তিতে এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। স্মার্ট ভূমি নকশা, ডিজিটাল মৌজা ম্যাপ, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ভূমি পিডিয়া চালুর মাধ্যমে ভূমি সেবা আরও সহজ ও কার্যকর করা হচ্ছে। এছাড়া নাগরিকদের অভিযোগ ও সেবা সম্পর্কে জানাতে হটলাইন (১৬১২২) চালু রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মমিনুর রহমান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) বিশ্বাস রাসেল, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শিবলী সাদিকসহ প্রমুখ।