লাল হেলমেটই মনে করাবে তোমার দেশ প্রেম
বাংলাদেশ সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বুধবার দিবাগত রাত ১টার পরে। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ছুটে আসে সচিবালয়ে। তখন সচিবালয় ৭ নম্বর ভবনের সামনেই আগুন নেভানোর তৎপরতা ফায়ার ফাইটারদের। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও তথ্য বাঁচানোই মূল লক্ষ্য ছিল তাদের।
দাউ দাউ করে জ্বলন্ত আগুন নেভানোর জন্য সড়কের উপর দিয়ে পানির পাইপ টেনে নিয়ে যাচ্ছিল ফায়ার সার্ভিস সদস্য মো. সোহানুর জামান নয়ন। এ সময় আকস্মিক একটি ট্রাক ধাক্কা দেয় দেয় তাকে। নিমিষেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। শুরু হয় রক্তক্ষরণ। দ্রুত হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হৃদয় বিদারক এই ঘটনা রাতের অন্ধকারের। একদিকে ভয়াবহ আগুনের দৃশ্য অন্য দিকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রক্ষায় তখনও ততটা গুরুত্ব পায়নি নয়ন হারানোর খবর। তবে ভোরের সূর্য উঠার সাথে সাথেই দৃশ্যত পায় নয়নের দেশ প্রেমের চিহ্ন।
রোদের তাপে সড়কের গায়ে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত কিছুটা নরম হয়েছে। তাতেই দগদগে রক্ত চিৎকার করে জানাচ্ছে নয়নের দেশ প্রেমের আর্তনাদ। পাশেই লাল হেলমেট পড়ে আছে। নয়নের মাথার সেই হেলমেটই জানান দিচ্ছে তার দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের। আর এই লাল হেলমেটই হয়ত মনে করাবে নিহত নয়নের দেশ প্রেম।
২০০০ সালে মিঠাপুকুরের আট-পনিয়া গ্রামে জন্ম নেয় সোহানুর জামান নয়ন। পরিবারে বাবা মা, ছোট বোন ও স্ত্রী আছে তার। ২০২২ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন এই টগবগে যুবক। নয়নের মূল কর্মস্থল সিলেটের বিশ্বনাথ ফায়ার স্টেশন হলেও পরবর্তীতে তাকে সংযুক্ত করা হয় তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে। কর্ম জীবনে দায়িত্ব ও নিষ্ঠার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন বহুবার।
সহকর্মীর মরদেহ রেখেই আগুন নেভানোর যুদ্ধ চলমান রাখে ফায়ার সার্ভিসের অন্য সদস্যরা। ৬ ঘণ্টার অভিযানে নিয়ন্ত্রণে আসে সচিবালয়ের আগুন। আগুন নেভানো শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ফায়ার ফাইটার নয়নের প্রথম জানা অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গ বাজারের অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে। এর পর নয়নের নিজ এলাকা রংপুরে পাঠানো হবে তার মরদেহ।
ঢাকায় নয়নের মরদেহ গ্রহণের জন্য চাচাতো ভাই এসেছেন। তবে তার নিজ জন্মভূমিতে হারানোর বেদনায় কাতরাচ্ছেন তার পরিবার। স্ত্রীর বেদনাসিক্ত মন কতটা সইবে সরকার ও স্বামীর সহকর্মীদের শান্তনায় তা অনুমেয় নয়। তবে ভাই হারানোর আর্তনাদেন কাঁদা বোন ও সন্তানের লাশের বোঝা কেমনে সইবে বাবা আক্তারুজ্জামান??