বেনাপোল বন্দরে ৩ দিন ধরে ফল, মাছ ও সবজি খালাস বন্ধ

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর) | 2024-06-29 15:08:44

মাছ, ফল ও সবজি জাতীয় পণ্য আমদানিতে এনবিআরের নতুন নীতিমালায় পণ্যবাহী ট্রাকের চাকা অনুপাতে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন নির্ধারনের প্রতিবাদে বেনাপোল বন্দরে তিন দিন ধরে অর্ধশতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক খালাস বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে সরকার যেমন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি আটকে থাকা পণ্য পঁচে লোকসানের আশঙ্কা বাড়ছে ব্যবসায়ীদের।

এদিকে এনবিআরের নতুন নির্দেশনায় বড় ধরনেরত অর্থনৈতিক ক্ষতি ও দেশের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষোভ জানিয়ে আইন বাতিলের দাবিতে ইতিমধ্যে বিক্ষোভ করেছেন তারা। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে এনিবিআরের আদেশ তারা পালন করছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি নিয়ে রোববার আলোচনায় বসবে কাস্টমস।

বন্দর সূত্রে জানায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার বড় একটি অংশ ফল, মাছ ও সবজি জাতীয় পণ্য। সাধারণত পণ্যের পরিমাপ ও সংখ্যার উপর ভিত্তি করে আমদানি শুল্ককর আদায় করা হয়ে থাকে। কিন্তু এনবিআর ফল, সবজি ও মাছের ক্ষেত্রে কয় চাকার ট্রাকের পণ্য আসছে তার উপর ভিত্তি করে পণ্যের শুল্ককর আদায় করে। গত ২৩ জুন আবার নতুন করে ট্রাকের চাকা অনুপাতে পণ্যের ওজন বাড়িয়ে শুল্ককর নির্ধারণ করে চিঠি দেয় এনবিআর। এতে প্রতি ট্রাকে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা গুনতে হয়। এতে লোকসানে পড়ে পণ্য খালাস বন্ধ রাখে। এছাড়া নতুন করে চাপিয়ে দেওয়া শুল্ককর প্রত্যাহারে কাস্টমসে সামনে বিক্ষোভ করে। তবে কোন সমাধান না হওয়ায় পণ্য চালান আটকে গরমে নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এনিয়মে পণ্য আমদানি যেমন কমবে তেমনি সরকার রাজস্বও হারাবে।

আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে শতাধিক ট্রাক মাছ, ফল ও সবজি জাতীয় পণ্য আমদানি হয়। খালাস বন্ধ থাকায় ৩ দিনে সরকারের ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় কমেছে।

তিনি আরও বলেন, এনবিআরের নির্দেশনা পত্রে বলা হয়েছে, ৬ চাকার ট্রাকে কমলা, মালটার জন্য বাধ্যতামূলক ১৮ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকের থাকা পণ্যের ২০ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১৬ বা তার অধিক চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের ২৬ টনের শুল্ককর দিতে হবে। এছাড়া ৬ চাকার ট্রাকে থাকা আঙুরের জন্য ১৯ টনের শুল্ককর দিতে হবে।

৬ চাকার ট্রাকে থাকা আনারের জন্য ২৩ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকের থাকা পণ্যের ২৬ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১২ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যের জন্য ২৭ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ২৮ টনের এবং ১৬ বা তার অধিক চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের ২৯ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ৬ চাকার ট্রাকে থাকা আফেলের জন্য ২১ টনের শুল্ককর । ১০ চাকার ট্রাকের ২২ টনের শুল্ককর । ১২ চাকার ট্রাকে থাকা পণ্যের জন্য ২৩ টনের ডিউটি দিতে হবে। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ২৫ টনের ডিউটি এবং ১৬ বা তার অধিক চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের ২৬ টনের শুল্ককর দিতে হবে।

এছাড়া ৬ চাকার ট্রাকে থাকা হিমায়িত মাছের জন্য ৬ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকের ১০ টনের শুল্ককর । ১২ চাকার ট্রাকের ১৩ টনের শুল্ককর। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ১৮ টনের ডিউটি এবং ১৬ বা তার অধিক চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের ২০ টনের শুল্ককর দিতে হবে।
বরফ ছাড়া মাছের ৬ চাকার ট্রাকের ১৫ টনের শুল্ককর দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকের ১৮ টনের শুল্ককর। ১২ চাকার ট্রাকের ২০ টনের শুল্ককর। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ২১ টনের এবং ১৬ বা তার অধিক চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের ২২ টনের শুল্ককর দিতে হবে।

বন্দরে মাছ নিয়ে আটকে থাকা ট্রাক চালক মহিদুর রহমান জানান, কাস্টমস ছাড়পত্র না দেওয়ায় ৩ দিন আটকে থেকে পণ্য নষ্ট হচ্ছে। একই কথা জানান সবজি বহনকারি ভারতীয় ট্রাক চালক উত্তম ।

আমদানি-রফতানিকারক উজ্বল বিশ্বাস জানান, এনবিআর নির্দেশনায় বলেছে কোন পণ্যবাহী ট্রাকে পণ্যের ওজন কমবেশি হলে তা শতভাগ ওজন করে খালাস দেওয়া যাবে। তবে কাস্টমস এনবিআরের ৪ নম্বর শর্ত মানছেনা। ফলে পণ্য খালাস নেওয়া কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে।

আমদানিকারক আবুল হোসেন জানান, এনবিআরের নতুন নিয়মে পণ্যের শুল্কায়ন হলে যেমন আমদানি কমে যাবে তেমনি ফল, মাছ ও সবজির বাজার চড়া হবে। ৩ দিন পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় কেবল ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েনি। এতে আমদানি কমায় সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা জাহিদ হাসান জানান, এনবিআরের নতুন আদেশ তারা কার্যকর করছেন। তবে কয়েকজন আমদানিকারক তারা অভিযোগ জানিয়ে পণ্য খালাস নিচ্ছেনা। আবার কেউ খালাস নিয়েছেন। তবে যারা পণ্য খালাস নেয়নি তাদের বিষয়ে রোববার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবেন জানান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর