ফুলগাজীতে বাঁধ ভাঙন

ঘরবাড়ি হারিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে বানভাসিরা



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ফুলগাজীতে বাঁধ ভাঙন, ছবি: বার্তা২৪.কম

ফুলগাজীতে বাঁধ ভাঙন, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে উত্তর দৌলতপুরের নুরুল করিমের ঘর। সোমবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাঁধ ভাঙা পানির তোড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় টিনের ঘর। ঘর ধ্বসে চাল নেমে আসে মাটিতে। যে কয়টি আসবাবপত্র ছিল তা পাওয়া গেল বন্যার প্রবাহমান পানিতে। রাজমিস্ত্রী নুরুল করিমের নতুন করে ঘর তৈরি করার সাধ্য নেই। ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে এখন যেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে খুব কাছ থেকে দেখছেন।

বুধবার (৩ জুলাই) বন্যায় নিজের ক্ষতি প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন নুরুল করিম। নুরুল করিমের মতো এমন অবস্থা এলাকার অধিকাংশ মানুষের। বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি তাদের।

নুরুল করিম ঢাকা একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন। অর্ধ শতাব্দী আগে ফেনী সদরের ধর্মপুর এলাকা থেকে ভাগ্যের অন্বেষণে দৌলতপুরে আসেন নুরুল করিমের বাবা। ৪ শতাংশ জায়গায় বসতি স্থাপন করেন। বন্যায় ভিটামাটি হারিয়ে আবার পথে নেমেছেন তিনি।

সহায় সম্বলহীন হয়ে নুরুল করিম বলেন, সোমবার বিকেলে স্ত্রীর ফোন পেয়ে রাত আড়াইটায় বাড়িতে এসে দেখি দুই সন্তানকে নিয়ে আমার স্ত্রী নদীর দিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছেন।

নুরুল করিমের মত দুঃখী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা। নুরুল করিমের বাড়িতে যান উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হারুন মজুমদার। নুরুল করিম জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান স্থানীয়ভাবে বাসা ভাড়া করে থাকতে বলেছেন। ঘরের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তিনি বাসা ভাড়া মেটাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

চলতি বছরে আরও একবার মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফের দুর্গতিতে পড়েছেন এ এলাকার মানুষরা। দীর্ঘ বছর ধরে বাঁধ ভাঙা-আর মেরামতের বৃত্তে জীবন কাটছে তাদের।


‘ঢল আইবো আর যাইবো, লাভ অইবো হেতেরগো। আন্ডা মইদ্দে হড়ি পিষি যাইয়ের, ক্ষেত করি আর লাভ নাই। হগগল জিনিসের দাম বেশি, আন্ডা দাম কমি গেছে’- এভাবে ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে নিজেদের অবস্থা প্রকাশ করেন স্থানীয় আরেক কৃষক আবদুল খালেক।

প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী, কুহুয়া এবং সিলোনিয়া নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে ফুলগাজী-পরশুরাম উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়। অবকাঠামো ও কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এসব অঞ্চলে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যানুযায়ী, ২০১২-২০২২ সাল পর্যন্ত এক দশকে বন্যায় ফুলগাজীতে ৪০৩ একর জমির ধান ও সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সময়ে ১২৬ হেক্টর জলাশয়ে ৪৬৮ টন মাছ ভেসে গেছে। শত বছরের হিসেব করলে তা দাঁড়াবে বিশাল অঙ্কে।

বন্যার পানির প্রবল তোড়ে ঘরের সব মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী ছকিনা আক্তারের ঘরে। তিনি জানান, রান্না করার পাতিল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। প্রতিবন্ধী দুই সন্তান নিয়ে কোনোভাবে বেঁচে ফিরছি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সোমবার রাত থেকে না খেয়ে থাকতে হয়েছে। ১৯৮৮ সালের পরে এত বড় বন্যা আমি আর দেখি নাই।

মুহুরী নদীর বাঁধ নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের শেষ নেই। তাদের ভাষ্যমতে, বন্যাকবলিত মানুষের কষ্ট দেখতে গণমাধ্যমে নিয়মিত সংবাদ হয়, ত্রাণের পরিধি বাড়ে। কিন্তু যখন পানি নেমে যায় তখন বন্যাকবলিত মানুষগুলোর খোঁজ কেউ নেয় না। জীবিকার তাগিদে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ নিয়ে আবার সংগ্রাম শুরু করতে হয়। বছরের পর বছর ধরে চলছে এ দুর্ভোগ।

উত্তর দৌলতপুরের সত্তোরর্ধ বৃদ্ধ আবুল কালাম জানান, বাঁধ ভেঙে ঘরে পানি ঢুকে গেছে। আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। দুই ছেলে মেয়ে ও নাতি-নাতনি নিয়ে গতকাল রাত থেকে দুর্ভোগে আছি।

আবহাওয়া অধিদফতর তথ্যানুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন পর বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যমতে, পানির চাপে মুহুরী নদী আরও বাড়তে পারে।

সিলেটে নৌকা থেকে ২৬৫ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার, আটক ১



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
উদ্ধারকৃত ভারতীয় চিনি।

উদ্ধারকৃত ভারতীয় চিনি।

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেটের গোয়াইনঘাটে পুলিশের অভিযানে চিনি বোঝাই ২টি নৌকা থেকে ২৬৫ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ এক চোরাকারবারিকে আটক করা হয়েছে।

শুক্রবার (০৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জাফলং ইউনিয়নের অন্তর্গত উত্তর প্রতাপপুর এলাকা থেকে চিনি উদ্ধার ও তাকে আটক করা হয়। 

আটককৃত আবুল হায়াত (৩০) পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের লুনি হাওর গ্রামের আব্দুল ওয়াহিদের ছেলে।

শুক্রবার রাতে গোয়াইনঘাট পুলিশ জানায়, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশনায় একটি আভিযানিক টিম উপজেলার ২নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের উত্তর প্রতাপপুর গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে পলাতক আসামিদের ফেলে যাওয়া ২টি নৌকাসহ ২৬৫ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার এবং আবুল হায়াতকে আটক করা হয়। উদ্ধারকৃত ভারতীয় চিনির মূল্য ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। 

এদিকে এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে আটককৃত আবুল হায়াতকে প্রধান আসামি করে ও ৫ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা রুজু করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম পিপিএম।

;

নিরাপত্তাকর্মীকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা, আত্মগোপনে ফ্ল্যাট মালিক মফিদুল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় গাড়িচাপা দিয়ে নিরাপত্তাকর্মী মো. ফজলুল হককে (২৫) হত্যার পর গাঁ ঢাকা দিয়েছে ঘাতক গাড়ি চালক ও ফ্ল্যাট মালিক ইঞ্জিনিয়ার মফিদুল ইসলাম (৬৯)।

গত বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) সকালে এ ঘটনার পর রাতে মফিদুলকে আসামি করে মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী। এরপর শুক্রবার (০৫ জুলাই) পর্যন্ত একাধিক অভিযান চালালেও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেট ভেঙে ফজলুলকে চাপা দেয় মফিদুল। তবে নিহতের পরিবারের দাবি, কোন কারণে জিদ থেকে বা পরিকল্পনা করে এই হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

মামলার এজাহারে নিহতের স্ত্রী শরীফা বেগম দাবি করেন, ঢাকায় সেফ ফোর্স সিকিউরিটি কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন ফজলুল। এক মাস আগেই এই ভবনে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে নিয়োগ পান। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে তার ডিউটি ছিল। এসময় সকাল সোয়া ৮টার দিকে আসামি মফিদুল গ্যারেজ থেকে বের হওয়ার সময় দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে ফজলুলকে ধাক্কা দিলে গেট ভেঙ্গে রাস্তার উপর ছিটকে পড়ে সে। এসময় মফিদুল তার গাড়িটি ফজলুলের শরীরের উপর উঠিয়ে দেয়। এসময় তার কোমর ভেঙ্গে যায়, কপাল, ডান হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটাসহ গুরুতর জখম হয়। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন। এর মধ্যে গাড়ির মালিক মফিদুল তার গাড়িটি রেখেই পালিয়ে যান।

তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে শরিফা বেগম বলেন, আমার দুইটা মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ৫ বছর আর ছোট মেয়ের বয়স ১৬ মাস। আমার মেয়ে দুটো এতিম হয়ে গেলো। আমি এখন এদের নিয়ে কীভাবে থাকবো। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।

নিহতের বোন মিনারা বেগম বলেন, ঘটনার পর পুরো বিষয়টি ম্যানেজের চেষ্টা করছে রাজাবাজারের স্থানীয় বড় ভাই পরিচয় দেওয়া চুন্নু ও শাহজাহান নামে দুই লোক। কয়েক দফায় কাউন্সিলরের অফিসে তাদের বুঝানো হয়েছে মীমাংসার জন্য। 

তিনি বলেন, আমাদের সাথে মীমাংসার কথা বলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে মফিদুল ইসলামের গাড়ির চালক বলছেন, গাড়ির ব্রেকপ্যাড ক্ষয় হয়ে গিয়েছিল। স্যার সেটা চেক করতে গাড়িতে উঠে পা দিয়ে একসেলেটর চাপ দেন, এরপর গাড়ি চলতে শুরু করলে তিনি হয়তো থামাতে গিয়ে ব্রেকে পা না দিয়ে ভুলে একসেলেটরে আরও জোরে চাপ দেন। এতে গাড়ি মুহূর্তের মধ্যে গেট ভেঙে বাইরে গিয়ে ধাক্কা খায়।

এ ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেট ভেঙে ফজলুলকে চাপা দেয় আসামি মফিদুল। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। আমরা তাকে গ্রেফতারের জন্য কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছি। খুব দ্রুতই আসামিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

;

নরসিংদীতে নিখোঁজের একদিন পর শিশুর মরদেহ উদ্ধার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
নিহত শিশু আয়েশা/ছবি: সংগৃহীত

নিহত শিশু আয়েশা/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নরসিংদীর মনোহরদীতে আয়েশা আক্তার নামে দেড় বছরের এক শিশু নিখোঁজের একদিনপর ধান ক্ষেত থেকে তার মরদেহ পাওয়া গেছে। 

শুক্রবার (০৫ জুলাই) বেলা এগারটার দিকে মনোহরদী পৌরসভার হাররদীয়া এলাকায় ধান ক্ষেত থেকে শিশুর মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। শিশু আয়েশা মনোহরদী পৌরসভার হাররদিয়া গ্রামের আসাদ মিয়ার মেয়ে। 

শিশুর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) সকাল ৯টার পর থেকে নিখোঁজ হয় শিশু আয়েশা। অনেক খোঁজাখুঁজি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিসহ পোস্ট দেওয়ার পরও নিহত আয়েশাকে না পেয়ে চিন্তায় পড়ে যায় পরিবারের লোকজন। 

পরে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বাড়ির পাশে বৃষ্টির পানি জমে থাকা ধানের জমিতে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে প্রতিবেশি। পরে শিশুটির পরিবারের লোকজন এসে মরদেহটি শনাক্ত করে এবং মনোহরদী থানায় খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুর মরদেহটি উদ্ধার করে। 

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া বার্তা২৪.কমকে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে। শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে।

;

সাপের খামারে রিমালের তাণ্ডব, ২৫০ সাপের মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পটুয়াখালী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পুরো পটুয়াখালী। বাদ যায়নি বাংলাদেশ স্নেক`স ভেনাম (Bangladesh snakes venom) নামের দেশের প্রথম বিষধর সাপের খামারটিও। রিমালের তাণ্ডবে খামারের প্রায় ২৫০টি বিষধর সাপের মৃত্যু হয়েছে।

তবে খামারটির সরকারি অনুমোদন না থাকায় বনবিভাগ তথা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতার সুযোগ নেই। আব্দুল রাজ্জাক বিশ্বাস নামের এক তরুণ দেশসেরা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০০০ সালে পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের নন্দিপাড়া গ্রামে তার নিজ বাড়ির পাশে একটি কিং কোবরা সাপ এবং ২৪টি ডিম নিয়ে গড়ে তোলেন দেশের প্রথম বিষধর সাপের খামার। পরিকল্পনা ছিল সরকারি অনুমোদন পেলে সাপের বিষ সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে হবেন দেশ সেরা উদ্যোক্তা। কিন্তু সেই রাজ্জাক বিশ্বাসের স্বপ্ন এখন অধরাই রয়ে গেল।

বর্তমানে দেশীয় নামে পরিচিত কিংকোবরা, পাইথন, পঙ্খীরাজ, কালকুলিন, সাদা গোমা, কেউটে, দাঁড়াশ, বাসুয়া, পদ্ম গোমা, বিষঝুড়ি ও গোঁড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় দের শতাধিক বিষধর সাপ রয়েছে রাজ্জাক বিশ্বাসের খামারে।

নন্দিপাড়া গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রাজ্জাক বিশ্বাস ভাই ২৩ থেকে ২৪ বছর পর্যন্ত এর সাপের খামার লইয়া কষ্ট করতে আছে। এই বইন্নায় আমাগো এলাকায় কোমর পর্যন্ত পানি উঠছিল, আর এই পানিতে ভাইর কয়েক'শ সাপ মারা গেছে। ভাই তার বাপ মায় মরণেও এতো কষ্ট পায় নাই, এই সাপগুলা মরণের কারণে যে কষ্ট পাইছে।

একই এলাকার হায়দার বিশ্বাস বলেন, রাজ্জাক ভাই এই সাপের খামার কইরা কইরা নিজের আর বাপের টাহা পয়সা সব শেষ করছে। এহন বাপের থুইয়া যাওয়া জমি বন্ধক আর বেইচা চলতেছে। সরকার যদি এই মুহূর্তে তারে একটু সাহায্য করতো তাহলে হয়তো রাজ্জাক বিশ্বাস আবারও ঘুইরা দাড়াইতে পারতো।

এ বিষয়ে রাজ্জাক বিশ্বাস বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই সাপের খামারটি এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছি৷ সাপের খামারটি টিকিয়ে রাখতে গিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। কিছুদিন আগে আমার একমাত্র ছেলেটা মারা যায়, ছেলের মৃত্যু কথা শুনে আমার আব্বাও মৃত্যুবরণ করলেন। ছেলে আর বাবার মৃত্যুর এক মাস পর আমার মা মারা গেলেন! স্বজনদের হারানো শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই রিমালের কারণে পানি উঠে আমার খামারের প্রায় আড়াইশ সাপ মরে যায়। আমি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি, কিছুই করতে পারি নাই! 

সাপের খামারের ২৫০ সাপের মৃত্যুর বিষয়ে পটুয়াখালী উপকূলীয় বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, 'যেহেতু রাজ্জাক বিশ্বাস অবৈধ ভাবে সাপের খামারটি পরিচালনা করছে, তাই তাকে সরকারি সহযোগিতার কোনো সুযোগ নেই। গত বছরের ১১ এপ্রিল বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ও উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হয়ে খামারটি বন্ধ করে সাপ বনে ছেড়ে দেওয়ার জন্য একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু খামারটি এখনও চলমান আছে তাই এটিকে বন্ধের জন্য আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো৷

;