জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করবে সংসদীয় কমিটি

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো | 2024-07-04 14:38:34

চালুর আগেই চট্টগ্রাম নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজে বেশকিছু অনিয়ম খুঁজে পেয়েছেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। এক্সপ্রেসওয়েতে তৈরি হওয়া ফাটল পর্যবেক্ষণ করে এই বিষয়ে আরও তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। পাশাপাশি এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে যারা অনিয়ম এবং গাফিলতি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করার কথাও জানিয়েছেন তারা।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) চট্টগ্রামে এসেছেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। প্রথমদিনের পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তারা।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অভিযোগ তদন্ত এবং নির্মাণকাজের গুণগত মান যাচাইয়ে একটি উপকমিটিও গঠন করেছে স্থায়ী কমিটি। গত ১০ জুন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. মজিবুর রহমান এবং সংরক্ষিত আসনের সদস্য পারভীন জামান। এই উপকমিটির সদস্যরাই চট্টগ্রামে সফরে এসেছেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

সংসদীয় দলের সদস্যরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা প্রান্ত পর্যন্ত যান। এই সময় তারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের লালখান বাজার অংশে অন্তত চারটি পিলারে দেখা যাওয়া ফাটল পর্যবেক্ষণ করেন। প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলাকালে গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চারটি পিলারে এই ফাটল ধরে।

পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। কমিটির আহ্বায়ক এম এ লতিফ বলেন, আমরা এক্সপ্রেসওয়ের ত্রুটিগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি এবং পুরোটা পথ ঘুরে দেখেছি। যেহেতেু এটাতে কোনো লুপ নেই, এটা ওভারপাসের মতো কাজ করছে। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করল সরকার। শহরের যানজট নিরসনের জন্যই মূলত প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্প চট্টগ্রামবাসীকে দিয়েছেন। কিন্তু এটা যে উদ্দেশে বানানো হয়েছে সেই উদ্দেশ্যে পুরোপুরিভাবে পূরণ করছে না। এই বিপুল টাকা ব্যয়ের পরও কেন শহরের মানুষ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারবে না। তাহলে এত টাকার ফান্ড, ব্যাংকের সুদ কারা দেবে?

এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হবে জানিয়ে এম এ লতিফ আরও বলেন, যারা ভুল ত্রুটি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাদের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হবে। আমরা ফাটলগুলো সচক্ষে দেখেছি। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করব। তাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

পরিদর্শনের সময় বেশ কিছু অনিয়ম চোখে পড়েছে বলে জানান এম এ লতিফ। তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের ফিনিশিং কাজের মধ্যে যেসব ত্রুটি দেখেছি সেগুলো আমরা পরামর্শদাতা সংস্থাকে বলেছি। আর রেলিংয়ের সংযোগস্থলে যেসব নাটবল্টু লাগানো হয়েছে সেগুলোতে কিছুটা ত্রুটি চোখে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে গাড়ি চলাচলের সময় বড় ঝাঁকুনি দেয়। অন্যান্য এক্সপ্রেসওয়েতে আমি সেটি দেখিনি। এক্ষেত্রে নকশাগত কোনো ত্রুটি কিংবা কোনো গাফিলতি আছে কিনা প্রতিটি বিষয় আমরা দেখব। আমাদের হাতে তিনমাস সময় আছে। প্রয়োজনে আরও সময় বাড়ানো হবে।

নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি চট্টগ্রাম নগরের ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’এর উদ্বোধন করেছিলেন। যদিও উদ্বোধনের সাড়ে আট মাস পার হলেও এখনো গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি।

নগরের লালখান বাজার থেকে শুরু হয়ে পতেঙ্গায় গিয়ে শেষ হওয়া এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের র‍্যাঙ্কিন। এই এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন অংশে ১৫টি র‍্যাম্প (গাড়ি ওঠা-নামার পথ) রয়েছে। মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো র‍্যাম্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। ফলে গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি। কিন্তু চলাচল শুরুর আগেই এই প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর