সরকারের একক প্রচেষ্টায় শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট অংশিজনদের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
শনিবার (১৩ জুলাই) ঢাকার এফডিসিতে শিশুশ্রম প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার শিশুশ্রম নিরসনে গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করছে। শিশুশ্রম নিরসনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না এলেও রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোন ঘাটতি নেই। ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।
তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলাকে দেশের প্রথম শিশুশ্রমমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া রাজশাহীসহ আরও কয়েকটি জেলাকে শিশুশ্রমমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এক বছরের মধ্যে আরও কয়েকটি জেলা ও উপজেলাকে শিশুশ্রমমুক্ত করা সম্ভব হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, যে বয়সে শিশুদের হাতে থাকার কথা বই খাতা, সেই বয়সে অনেক শিশুকে জীবন সংগ্রামের জন্য হাতে তুলে নিচ্ছে শ্রমের হাতিয়ার। নিজের কিংবা পরিবারের দু’মুঠো খাবারের জন্য বেছে নিচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এদের মধ্যে অনেকেই ওয়েল্ডিং, লোহা-ইস্পাত ঝালাই, মটরগাড়ির ওয়ার্কশপ, জুতার কারখানা, বিড়ি তৈরি, টেইলারিংসহ বিভিন্ন অতি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। এমনও দেখা গিয়েছে যে কোমল দুটি হাতে বই থাকার কথা সেই দুটি হাত দিয়ে রিকশা বা ভ্যানগাড়ি চালাচ্ছে। টেম্পুর হেলপারি করছে। মাথায় করে ইটের বোঝা বহন করছে।
তিনি বলেন, আমাদের আইনে শিশুশ্রম নির্মূলে নানা পদক্ষেপের কথা বলা থাকলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। যদি আমরা ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসন করতে ব্যর্থ হই, তাহলে এসডিজি’র গোল ৮ অর্জন হবে না। শিশুশ্রম নিরসনে সরকারি সংস্থাসমুহ ও এনজিও’র মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। গত ২ দশকে শিশুশ্রম নিরসনে কি পরিমাণ টাকা বিদেশ থেকে এসেছে, সঠিকভাবে তা ব্যয় হয়েছে কিনা যাচাই করা উচিৎ।
তিনি আরও বলেন, সারা দেশে ৩৪ লাখেরও বেশি পথশিশু রয়েছে। যারা অনাহারে, অনাদরে বাবা-মা, অভিভাবকের যত্ন ছাড়াই রাস্তাঘাট, বাস স্টেশন, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনে বেড়ে উঠছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই কুলির কাজ, ভাঙাগারী সংগ্রহ কিংবা ভিক্ষাবৃত্তি করছে। শীত, গরম, ঝড়, বৃষ্টি কোনকিছুতেই তাদের থাকার কোন নিরাপদ আশ্রয় নেই। পরিত্যক্ত এসব শিশুরা নানা রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। তাই শিশু শ্রম নিরসনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সংস্থা সুশীল সমাজসহ বিত্তশালীদের সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে। তবে শিশু শ্রম বন্ধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে যত উন্নয়নই হোক না কেন, যদি আমরা পথশিশুদের সুরক্ষাসহ শিশুশ্রম বন্ধ করতে না পারি তাহলে সেই উন্নয়ন টেকসই হবে না।