‘ছেলেটা এবছর এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার বাবা কইছিল ছেলে পাস করলে বাড়ির সবাইকে ঢাকা নিয়ে গিয়ে একসঙ্গে বসবাস করবে। সংসার করাতো দূরের কথা, জীবনে আর কখনো তার মুখটাও দেখতে পারব না। ছেলে-মেয়ে বাবা বলে ডাকতে পারবে না। আর কোনদিন আমাদের খোঁজ খবর নিবেনা।’ কথাগুলো বলছিলেন কোটাবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া হোটেল শ্রমিক আব্দুল গণির স্ত্রী লাকী আক্তার।
এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অথৈ সাগরে ভাসছেন লাকী আক্তার। রাজবাড়ীর সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা তারা।
লাকী জানান, ১৪ বছর যাবত তার স্বামী ঢাকার হোটেলে কাজ করতেন। গত ১৯ জুলাই সকাল ৯ টার দিকে তার গোপীবাগ উত্তর বাড্ডার বাসা থেকে বের হয়ে গুলশান ৬ নম্বর রোডের কর্মস্থল আবাসিক হোটেল সিক্স সিজনে যাচ্ছিলেন। পথে হোটেলের মাঝামাঝি স্থানের গুলশান শাহজাদপুর বাঁশতলায় গেলে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে পড়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে তার মরদেহ ১দিন পর দাফন করা হয়।
নিহত গণির বাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম। স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় স্ত্রী। অঝোরে কাঁদছেন তিনি। পাশেই বসে ছেলে আলামিন, মেয়ে জান্নাত। পাশে দেখা মেলে স্থানীয় প্রতিবেশীসহ স্বজনদের। লাকী আক্তারকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। বারবারই স্বামীর স্মৃতিচারণ করে ঢুকরে কাঁদছেন। কিভাবে চলবে সংসার, কিভাবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাবেন তা নিয়ে তার ভাবনার শেষ নেই।
কান্না জড়িত কণ্ঠে নিহত গণির স্ত্রী লাকী আক্তারকে বলতে শোনা যায়, যেদিন তিনি গুলিবিদ্ধ হন সেদিন তার ছুটি ছিল। আমার কাছে ফোন করে আমার পাশের বাড়ির বাসের সুপারভাইজার কাকার কাছে ফোন দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে কিনা খোঁজ নিতে বলেন। সেদিন তিনি বাড়ি আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারপরই তার অফিস থেকে ফোন করে তাকে হোটেলে যেতে বলেন, আর সে তখন হোটেলে যাওযার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। স্বামী হত্যাকারীর বিচার চান তিনি। তার সন্তানদের নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনের গ্যারান্টি চান এই হতভাগ্য নারী।