রাজশাহী অঞ্চলে কমেছে বৃষ্টিপাত। এতে ডোবা, খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকা ও পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় এ অঞ্চলে পাট চাষে প্রভাব পড়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক কৃষক। কৃষি অফিস বলছে, গত বছরের চেয়ে এবছর প্রায় দুই হাজার হেক্টর কম জমিতে পাট চাষ হয়েছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এই সময় বৃষ্টিপাত কম হয়েছিল। ফলে পাট জাগ দিতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে চাষীদের। এ বছরও পাটের বীজ বপনের সময় বৃষ্টিপাত হয়নি। গত বছর জেলায় ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল, যা এবছর কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ০৮৫ হেক্টর জমিতে।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির অভাবে উপজেলায় বেশিরভাগ খাল-বিল, ডোবা এবং জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি নেই। জেলার বিভিন্ন উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোতেও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নদীর সংলগ্ন কৃষকেরা যে সামান্য পানি পাচ্ছে, তা দিয়ে কোনোভাবে পাট জাগ দিতে পারলেও দূরের কৃষকরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের চাষী ইমরান আলী জানান, গত বছর ৬ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন, তবে এ বছর চাষ করেছেন ৪ বিঘা জমিতে। তিনি উল্লেখ করেন, ডোবা বা খালে পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়ার সমস্যায় পড়েছেন। এ কারণে পুকুরে পানি দিয়ে পাটের জাগ দিতে হচ্ছে, যা অতিরিক্ত খরচের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাষী আব্দুর রহিম জানান, পাট চাষের পর পর্যাপ্ত পানি না থাকলে জাগ দেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। পুকুর ভাড়া নিয়ে বা সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের পাট চাষি নুর ইসলাম জানান, তার জমি ইউনিয়নের মাহেন্দ্র বিলে। কিন্তু পাট কেটে তাকে জাগ দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে হচ্ছে ৮ কিলোমিটার দুরে তেবাড়িয়া বিলে। এতে অনেক খরচ হচ্ছে। পাট বেচে খরচ উঠবে না বলে জানান তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে সালমা জানান, এখনও ভরপুর পাট কাটা শুরু হয়নি। জেলায় পাটের আবাদ ভাল হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে পাট জাগ দেওয়ার সমস্যা কিছুটা লাঘব হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর জুলাই মাসে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় চাষীরা কিছুটা সুবিধা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, চাষিরা রিবন পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছড়িয়ে কম পানিতে অল্প জায়গাতে বেশি জাগ দিতে পারবেন। পাশাপাশি রিবন পদ্ধতিতে পাট জাগ দিয়ে আঁশ ভাল পাওয়া যায় এবং দামেও বৃদ্ধি পায়। সবমিলিয়ে এবারো পাটের উৎপাদন ভাল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।