‘কী দোষ ছিল আমার মানিকের, এক গুলিতেই দুনিয়া থাকি চলি গেল’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2024-08-03 20:04:12

‘কী দোষ ছিল আমার মানিকের, এক গুলিতেই দুনিয়া থাকি চলি গেল, কাকে দিবো এই বিচার?’ আমিতো প্রধানমন্ত্রীর গোরে পৌঁছাইতে পারি নাই। কে নেবে আমার খোঁজ? বাবাতো চলি গেইচে, আর আসবে না। কি হবে মাছুম বাচ্চাটার? অসহায় কণ্ঠে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে নিহত মানিকের মা আল্লাহর কাছে বিচার দিচ্ছিলেন। 

ছেলে হারিয়ে পাগল প্রায় মানিকের মা নুরজাহান বেগম। মৃত্যুর ৩ সপ্তাহ পরেও চলছে দিন-রাত কবরের পাশে তার আহাজারি। সেই সঙ্গে স্বামী হারিয়ে শোকে পাথর নিহত মানিকের স্ত্রী মুন্নি বেগম।

রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুলাই বিকেলে দোকানের জন্য বেকারির খাবার সামগ্রী কিনতে গিয়ে ধান গবেষণার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না রংপুর নগরীর বাসিন্দা মানিকের। ১৭ মাসের শিশু মেরাজুলের মুখে বাবা ডাক শোনার আগেই চিরবিদায় নিতে হলো তাকে। ছোট্ট একটি চা-পানের দোকান করে সংসার চালাতেন তিনি। তবে প্রায় সময় দারিদ্র্যতা ঠেকাতে অটো চালিয়েও উপার্জন করতেন তিনি।

জানা গেছে, নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ডের ঘাঘটপাড়া গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর বড় সন্তান তিনি। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, ছোটভাই ও সন্তান নিয়ে টানাটানির সংসার ছিল তার। পরিবারের সদস্যের মুখে হাসি ফোটাতে দোকানের পাশাপাশি অটোর হ্যান্ডেলই ছিল তার ভরসা। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই)’র একটি গুলিই কেড়ে নিল তার জীবন। উপার্জনক্ষম একমাত্র মানুষটিকে হারিয়ে তাদের বাড়িতে এখন শোকের মাতম। ঘাঘটপাড়া মসজিদের কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।

কে আমাদের খোঁজ নিবে? কে দাঁড়াবে পাশে? বাবা হারা সন্তানের ভবিষ্যতই বা কি হবে? কী দোষ ছিল তার গুলি করে মারা হলো তাকে এমন প্রশ্নের উত্তর চেয়ে সরকারের কাছে ন্যায্য বিচার চান নিহত মানিকের স্ত্রী মুন্নি বেগম। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীসহ খুব কষ্ট করে সংসার চালাতাম। এখন বাচ্চাটা নিয়ে কি খাবো? আমার কোনো উপার্জনের পথ নাই। কোনো কাজ জানা নাই। বাচ্চাটার মুখের দিকে দেখে কলিজা ফেটে যাচ্ছে, কি ভবিষ্যত হবে তার? সরকারের কাছে আমার দাবি স্বামীর মৃত্যুর বিচার চাই। সেইসাথে ছোট্ট শিশুটির ভবিষ্যত চাই।

পরিবারে উপার্জনের মানুষটির চিরবিদায়ে নেমে এসেছে অন্ধকার৷ ভাইয়ের মৃত্যুর সঠিক বিচারের দাবি জানান ছোটভাই রতন। মানিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার ( অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর