‘আয়নাঘর’ থেকে অনেকে ফিরলেও খোঁজ নেই ইলিয়াস আলীর

, জাতীয়

মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2024-08-07 20:33:33

‘মা’ ডাক শুনবে বলে ছেলের অপেক্ষায় মা, স্বামীর জন্য স্ত্রী, বাবার অপেক্ষায় সন্তানরা। আর নেতার জন্য হাজারো কর্মীর অপেক্ষা। তিনি আসবেন বলে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা। সত্যিই কি তিনি ফিরে আসছেন তবে! ঘুচবে কি তাদের আক্ষেপ, না কি তাদের আক্ষেপই থেকে যাবে...

বলছিলাম বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর কথা।

একযুগ পরও ছেলে ফিরে আসবে বলে অপেক্ষা করছেন বৃদ্ধা মা সূর্যবান বিবি। স্বামীর সেবার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। আর বাবার আদরের জন্য অপেক্ষা করছেন তিন সন্তান আবরার ইলিয়াস অর্ণব, লাবীব শারার ও সাইয়ারা নাওয়াল।

২০১২ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এম ইলিয়াস আলী। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তার কোনো খোঁজ জানেন না কেউ।

সোমবার (৫ আগস্ট) সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ‘নিখোঁজ’ এম ইলিয়াস আলীর পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ইলিয়াস আলী আওয়ামী লীগ সরকারের ‘আয়নাঘরে’ বন্দি রয়েছেন।

জানা যায়, সরকার পদত্যাগের পরদিন আয়নাঘর থেকে অনেকেই ফিরে আসায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ইলিয়াসপত্নী লুনা। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, 'আয়না ঘরের অনেকে ফেরত আসছে। আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিন।'

ইলিয়াসপত্নী লুনার এমন স্ট্যাটাসে বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর তথা সিলেটের হাজার হাজার নেতাকর্মীও একই দাবি তুলেন।

বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরপাক খাচ্ছে একটি স্ট্যাটাস। বিভিন্নজন তাদের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর সন্ধান পাওয়া গেছে বলে। কিন্তু সেটা কতটুকু সত্য তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

সাধারণ মানুষের মুখে মুখেও চলছে আলোচনা; সত্যিই কি এম ইলিয়াস আলী ফিরে এসেছেন?

তবে বুধবার ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা ও ছেলে লাবীব শারার তাদের নিজের ফেসবুক আইডিতে পৃথক দুটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

ইলিয়াসপত্নী লুনা লিখেন- আমার স্বামী, এম ইলিয়াস আলী'র কোনো সন্ধান আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। দয়া করে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। আপনারা দোয়া করুন তিনি যাতে খুব শিগগিরই আমাদের মাঝে অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসেন। কোনো সন্ধান পাওয়ার সাথে সাথেই আমি অবশ্যই আপনাদের জানাবো।

একইভাবে লাবীব শারার লিখেন তার বাবার সন্ধান পাওয়া যায়নি। গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য।

এদিন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ইলিয়াস আলী ফিরে আসার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, এবিষয়ে এখনো কোন তথ্য পাইনি। সত্যি এরকম কিছু হলে জানাবো।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে গাড়িতে করে নিজের বনানীর বাসা থেকে বের হন ইলিয়াস আলী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গাড়িচালক আনসার আলী। রাত ১২টার পর মহাখালী থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ইলিয়াস আলীর প্রাইভেটকারটি উদ্ধার করে পুলিশ। তখন গাড়িতে ছিলেন না ইলিয়াস ও তার গাড়িচালক।

বনানী থানার তৎকালীন এসআই সাইদুর রহমান সেসময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মধ্যরাতে ইলিয়াস আলীর প্রাইভেটকারটি মহাখালী সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। গাড়ির ভেতরে পাওয়া চালক আনসারের মোবাইল ফোন সূত্রে জানা যায় গাড়িটি ইলিয়াস আলীর।

এরপর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা। দীর্ঘ এক যুগেও তার নিখোঁজ হওয়ার রহস্য উদঘাটন হয়নি। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই সিলেট বিএনপি নেতারা নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি করে আসছেন। ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির নেতারা। তবে কোনো সন্ধান মেলেনি তার।

তাছাড়া, শুরু থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের কাছে ধর্ণা দেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার স্বামীকে অবৈধভাবে আটকে রেখেছে দাবি করে, হাইকোর্টে রিট পিটিশনও দায়ের করেন তিনি। হাইকোর্টের আদেশ চান তার স্বামীকে হাজির করার।

পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও জানায়, নিখোঁজ এ দু’জনকে তারা তুলে নেয়নি। এভাবেই অমীমাংসিত থেকে যায় ‘ইলিয়াস অন্তর্ধান রহস্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর