দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) স্বাধীন ও কার্যকর করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে ৪৭টি সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করেছে এ কমিশন।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, দুদককে আরও গতিশীল করার জন্য আমরা স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে ৪৭টি সুপারিশ প্রস্তাব করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়নে ছয় মাস, মধ্যমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়নে ১৮ মাস ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বাস্তবায়নে ৪৮ মাস সময় লাগবে।
তিনি বলেন, দুদক বর্তমানে একটি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। তবে এটিকে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন
দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, আমরা চাই দুদক স্বাধীন ও কার্যকর হোক। তবে, এই স্বাধীনতারও সীমা থাকতে হবে। আমরা সংস্কার সুপারিশ করেছি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কমিশনের সদস্য সংখ্যা তিন থেকে পাঁচে বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়েছে। যার মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। অতিরিক্তভাবে দুদকের কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত বিচারিক ও আর্থিক দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, সুপারিশের ভিত্তিতে একটি কার্যকর দুদক গড়ে তুলতে রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে, না হলে দুদক কার্যকর হবে না।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। পরে একই মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্বল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে এবং জনমালিকানা, জবাবদিহি ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।
এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন এবং দুদকের সংস্কারের জন্য প্রথম ছয়টি কমিশন ৩ অক্টোবর গঠিত হয়।
এর মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
গুঁড়িয়ে দেয়া আ'লীগ ও জাসদ কার্যালয় ব্যক্তি মালিকানার দাবি
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম,বগুড়া
|
ছবি: বার্তা২৪.কম
জাতীয়
বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় ছাত্র- জনতার গুঁড়িয়ে দেয়া জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা জাসদের কার্যালয় ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি দাবি করে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।
শনিবার( ০৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বগুড়া শহরের সুত্রাপুর এলাকার উজ্জল নামের ব্যক্তি এই সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেন।
উজ্জলের বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ১৯৫২ সালে আমার দাদা কোরবান আলী ক্রয় সুত্রে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ জায়গার মালিক। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পর্যন্ত জায়গা তার দখলে ছিল। দেশ স্বাধীনের পর জায়গা বেদখল হয়ে যায়। এনিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জায়গা দখল করে তাদের অফিস করায় আমরা এতদিন দখলে নিতে পারিনি। এতদিন রাজনৈতিক দল গুলোর ভয়ে আমরা চুপ ছিলাম। ছাত্র জনতা গত বৃহস্পতিবার রাতে অফিস ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিলে আমরা সাহস করে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেই।
বগুড়া জেলা জাসদের সদস্য অ্যাডভেকেট আব্দুল লতিফ পশারি ববি বলেন,যারা মালিকানা দাবি করছে তাদের মামলা ১৯৯৪ সালে সিভিল কোর্ট মালিকানা খারিজ করে। এরপর মটর মালিক সমিতি মালিকানা দাবি করে মামলা করে। সেই মামলাও খারিজ হয়ে যায়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২০০৯ সালে এই জায়গা অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড হয়।
তিনি আরও বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে সেখানে ছাত্রলীগের অফিস ছিল। ৭৩ সালে জাসদকে এক বছরের ইজারা দেয়া হয়। এরপর মামলার কারণে পরবর্তীতে আর ইজারা নবায়ন করা হয়নি।
বগুড়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) পলাশ চন্দ্র সরকার বলেন, থানা পুলিশের মাধ্যমে ঘটনাটি জেনছি। সেখানে সার্ভেয়ার পাঠানো হয়েছে। নথিপত্র দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা নৌ পুলিশের সহায়তায় যৌথ অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে চোরাই বাল্কহেড কেটে বিক্রয় চক্রের সক্রিয় চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশ। এসময় পোস্তগোলা থেকে বাল্কহেডের কাটা অংশের প্রায় ৩০ টন ওজনের মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন নৌ-পুলিশ সদর দফতরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া) কাজী নুসরাত এদীব লুনা।
পুলিশ সুপার জানান, ২৩ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানাধীন বাউশিয়া ইউনিয়নের চর বাউশিয়া ফরাজীকান্দি নদীর ঘাট হতে ‘এমবি মাছিয়াতা দরবার শরীফ‘ নামের একটি বালুবাহী বাল্কহেডের স্টাফরা বালু আনার জন্য সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এসময় বাল্কহেডের খরচ বাবদ নগদ টাকা ও প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলসহ নিয়ে যায় তারা। পরে বাল্কহেডের স্টাফরা বালুবাহী বাল্কহেডটি চুরি করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি নৌ পুলিশের সদর দফতর নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশকে দ্রুততার সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের নৌ পুলিশ জোরদার অভিযান পরিচালনাসহ তাদের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। ঢাকার শ্যামপুর থানার সহায়তায় নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশ ও ঢাকা অঞ্চলের নৌ পুলিশের যৌথ অভিযানে পোস্তগোলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শুক্রবার একজন আসামীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। সেই সঙ্গে তার হেফাজত থাকা চোরাইকৃত বাল্কহেডটির ৪১১টি কাটা অংশ (যার ওজন প্রায় ৩০টন) উদ্ধার করা হয়। একই সময় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে চোরচক্রের আরো তিনজন সহযোগীসহ মোট চারজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।
এই সংক্রান্তে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে এবং অনান্য সহযোগীদের গ্রেফতারে জোর অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
ঝিনাইদহে বছরের পর বছর তামাক চাষ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ধানসহ বিভিন্ন রকমের ফসলের চাষ দিনদিন কমে যাচ্ছে। তামাক চাষিদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পেঁয়াজ চাষের ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত সার পাচ্ছেন না চাষিরা। এরই মধ্যে জেলার শৈলকুপা ও হরিণাকুণ্ডুতে পেঁয়াজ ও অন্যান্য চাষিরা সার সংকটের অভিযোগ করেছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়াই প্রতিবছর সর্বনাশা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছে এই অঞ্চলের চাষিরা।
এদিকে তামাকজাত পণ্যে বেশি ভ্যাট আরোপ ও বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা দিলেও তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহীত করা যাচ্ছে না। ফলে কমে যাচ্ছে খাদ্যজাত, ডাল ও মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন। এছাড়া চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসী জানান, তামাক চাষের জন্য প্রান্তিক কৃষকদের বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানি অগ্রিম সার, টাকাসহ নানাভাবে প্রলোভন দিচ্ছে। ফলে কৃষকরা অন্য ফসলের পরিবর্তে তামাক চাষে ঝুঁকছে।
জানা যায়, বিগত ৪ বছরে জেলায় তামাক চাষ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। জেলাশহর তলীতে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকোর তামাক ক্রয় কেন্দ্র থাকায় হাতের কাছে একটি নিশ্চিত বাজার তৈরি হয়েছে। সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ ও মনিটরিং নেই বলেই বেশি লাভের আশায় কৃষক তামাক চাষে ঝুঁকছে এমন অভিযোগ সচেতন মহলের। তামাকের বেশি ফলন পেতে অতিরিক্ত সারের ব্যবহারে জেলার বিভিন্ন জায়গায় সারের সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার ৬টি উপজেলায় কম-বেশি তামাক চাষ হলেও হরিণাকুণ্ডু, শৈলকুপা, সদর ও মহেশপুরে বেশি হয়।
ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ বলছে, ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য তামাক বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো চাষিদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। তারা তামাকের চারা রোপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশক কেনার জন্য কৃষকদের অগ্রিম টাকা প্রদান করে ও উৎপাদিত তামাক কেনার নিশ্চয়তা দেয়। এই কারণে খাদ্যজাতীয় ফসল বাদ দিয়ে এই অঞ্চলের কৃষকরা তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংগৃহীত তথ্যমতে, জেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৬০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। পরের বছর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৫১ হেক্টর জমিতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৯৩ হেক্টর ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২২৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলার মহেশপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৮৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত হরিণাকুণ্ডু উপজেলাতে ১২৪ হেক্টর, ১০২ ও এবছর সর্বচ্চো ১৫৫ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ করা হয়েছে।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর বলেন, উপজেলায় সবচেয়ে বেশি চাঁদপুর ইউনিয়নে তামাক চাষ করা হয়েছে। তামাক চাষিরা তামাক বাজারজাতকারী কোম্পানির নিকট থেকে অগ্রিম আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে। একারণে চাষিরা তামাক চাষে ঝুকছে। তামাক চাষিদের চাহিদার কারণে অন্যান্য চাষিরা চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছে না। ফলে অন্যান্য ফসলের আবাদ ব্যহত হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উদয়পুর গ্রামের তামাক চাষি বিপ্লব বলেন, আলু-পেঁয়াজ চাষ করলে বাজারে কতদামে বিক্রি হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু তামাক চাষ করলে দেশে যুদ্ধ বাধুক বা দুর্ভীক্ষ হোক বিঘা প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ দেয় কোম্পানি। একারণে তামাক চাষ করা। তিনি বলেন, গতবছর আমার ১০ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ ছিল, এবছরও ১০ বিঘা করেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে ৫০০-৬০০ কেজি তামাক উৎপাদন হয়। গতবছর কৃষকের কাছ থেকে কোম্পানি ২২৬ টাকা দরে প্রতিকেজি তামাক ক্রয় করেছে। উৎপাদিত তামাকের বিক্রি নিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। তামাকের বাজার স্থীর। কোম্পানিই কৃষকের কাছ থেকে সব তামাক কিনে নেয়। তামাক চাষে নিশ্চিত লাভ দেখে কৃষকরা অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বড়-ভাদড়া গ্রামের কৃষক লিটন মোল্লা বলেন, এবছর এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম কিন্তু পরিপক্ক করে ক্ষেত থেকে তুলে বাজারে নিয়ে গিয়ে যে দামে বিক্রি করেছি তাতে বীজের দামই ওঠেনি। পানের বরজ আছে। বাকি টাকায় সার-কিনতে গেলে সারের ডিলাররা আমাদেরকে দিচ্ছে না। তামাক চাষিরা নগদ টাকায় সার কিনে ক্ষেতে দিচ্ছে। তামাকের ক্ষেতে সার লাগে বেশি। যেকারণে আমাদের ইউনিয়নে ঢ্যাপ সারের সংকট দেখা দিয়েছে।
সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে কাজ করা এনজিও পদ্মা সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, তামাক চাষিদের বাজারের একটা নিশ্চয়তা রয়েছে যা অন্যান্য ফসল চাষিদের বেলায় নেই। তামাক চাষিদের কোম্পানি থেকে অগ্রিম অর্থ প্রদান করা হয় কিন্তু অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া খুব কষ্টের বিষয়। অন্যান্য ফসলের বাজারের অনিশ্চয়তা থেকেই মানুষ তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছে। তাছাড়া সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সঠিক প্রয়োগ ও মনিটরিং করেনা। কৃষি বিভাগও চাষের সঠিক পরিমাণ প্রকাশ না করে গোপন রাখে। তামাক যে একটি ক্ষতিকারক আবাদ এটা কৃষকরা জানেই না। যেকারণে তারাও নির্দিধায় চাষ করে যাচ্ছে। সরকার তৎপর হলেই ক্যাবল তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও জেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য কৃষিবিদ ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, আমরা তামাক চাষিদের বিকল্প ফসল চাষে উৎসাহিত করছি। তামাক কোম্পানিগুলো চাষিদের অগ্রিম অর্থ দেয় বলে জেনেছি। সরকার তামাক চাষ নিষিদ্ধ করেনি। কিন্তু আমরা নিয়মিত বিকল্প চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করা যায়, আগামীতে তামাক চাষ এই জেলায় কম হবে।
ময়মনসিংহে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় চক্রের মুলহোতাসহ ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। এই চক্রটি ৫০ টির বেশি অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মোহামেনুর রশিদ।
শনিবার (৮ ফ্রেব্রুয়ারী) বিকালে পুলিশ সুপার কার্য়ালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার মো. শাহাদত হোসেন (৪৬), একই উপজেলার আব্দুস সালাম (৪৫), শেরপুর সদর উপজেলার মো. শিখন আলী (২০), ময়মনসিংহ মুক্তাগাছ উপজেলার মো. আবু তাহের (৩৫)।
পুলিশ সুপার মোহামেনুর রশিদ বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর 'দৈনিক প্রথম আলো' পত্রিকার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (সার্কুলেশন) আবুল বাশারকে ময়মনসিংহ নগরীর দিঘারকান্দা বাইপাস থেকে অপহরণ করে একটি প্রাইভেটকারে উঠিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। তাকে ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে এবং তার মোবাইল থেকে নিকট আত্মীয়ের কাছে ফোন করে বিকাশের মাধ্যমে দুই লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ আদায় করে তাকে ত্রিশালথানাধী ন চেলেরঘাট এলাকায় আহত অবস্থায় নামিয়ে দিয়ে ঢাকার দিকে চলে যায়।
এই ঘটনায় মামলার পর গাজীপুর, শ্রীপুর, মাওনা, ভালুকা এবং ফুলপুরে একই প্রকৃতির একাধিক ঘটনার তথ্য পায় পুলিশ। পরে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি দল চক্রটিকে সনাক্ত ও গ্রেফতার করার জন্য কাজ শুরু করে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি চক্রটি একইভাবে আরও একজনকে অপহরণের জন্য প্রাইভেটকার নিয়ে বের হয়। এমন খবরের ভিত্তিতে গত ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি জেলার ত্রিশাল, ভালুকা-গফরগাঁও সড়ক এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা ও শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুলহোতা শাহাদাতসহ এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকেে একটি নীল রঙের প্রাইভেটকার, ৫টি মোবাইল ফোন ও নগদ ৮৭ হাজার টাকা জব্দ করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চক্রের মূল হোতা শাহাদত প্রায় ৮ বছর আগে মাওনা বাসস্ট্যান্ডে প্রাইভেটকার চালক থাকা অবস্থায় এই অপরাধে যুক্ত হয়। বিভিন্ন সময় একই পদ্ধতিতে ৫০ টিরও বেশি অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটিয়েছে এবং এই দীর্ঘ সময়ে সে তিন দফায় প্রায় দুই বছর কারাভোগ করেছে।
সর্বশেষ কাশিমপুর কারাগারে আটককৃত তাহেরের সাথে পরিচয় হয় এবং প্রায় দুই মাস আগে তারা জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও তাদের পুরাতন পেশায় ফিরে আসেন। শাহাদতের বড় ভাই সালাম ও তার আত্মীয় শিখন এই কাজে তাদেরকে সহযোগিতা করতেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করে যে, তারা বিভিন্ন বাসস্টেন্ডে শাহাদাত তার সঙ্গীদের প্রাইভেটকারে যাত্রী তুলতেন। গাড়িতে তোলার পর মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে হত্যার হুমকি দিয়ে বিকাশে টাকা দিতে বাধ্য করতেন। তাদের ব্যবহৃত বিকাশ একাউন্ট পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, গত দুই মাসে প্রায় দশ লক্ষাধিক টাকার লেনদেন করেছে।
চক্রটির আরও ৬ সদস্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদেরকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।