সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন নুরুল আলম

চট্টগ্রাম, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-31 13:55:43

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আদর্শে অটুট এবং মানুষের ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে একজন সাধারণ কর্মী থেকে সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন আলহাজ্ব নুরুল আলম চৌধুরী।

শুক্রবার (১লা ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে তাঁর স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় অতিথিরা এমন কথাই বলেন। চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের জেলা যৌথ উদ্যোগে এ শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভূমিপ্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, দলের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকে সুসংগঠিত করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে সারাজীবন মানুষের সেবা করে গেছেন। তিনি এত রসাল বক্তব্য দিতেন, যার বক্তব্য শুনার জন্য মানুষ ভিড় করতো। তার মতো এমন সংগ্রামী জীবন আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণার। 

তথ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে চিন্তা করা হয়। কিন্তু অনেক রাজনীতিবিদ এটি ভুলে গেছেন। রাষ্ট্রের এবং সর্বোপরি জনগণের কল্যাণই হলো রাজনীতি ব্রত। আলহাজ্ব নুরুল আলম সে ব্রত নিয়েই জীবন অতিবাহিত করেছেন। আজ এমন সময়ে তার চলে যাওয়ার ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ তার বক্তব্যে বলেন, ওমানের রাষ্ট্রদূত থাকাকালে তিনি নিজের পয়সা খরচ করে মানুষকে ওমানে নিয়ে গেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে, দলের প্রতি ত্যাগ করে গেছেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, কষ্ট, ত্যাগ ও সংগ্রামের জন্য তিনি অমর হয়ে থাকবেন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিকে আদর্শ হিসেবে ধারণ করে আজীবন রাজনীতি করেছেন। তিনি চাইলেই অবৈধভাবে ক্ষমতার প্রলোভনে নিজেকে শামিল করতে পারতেন। তিনি সবসময় আদর্শের শক্তির সাথে বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করে গেছেন, কখনও পিছপা হননি। বঙ্গবন্ধুর সময়ে ১৯৭৩ সালে এত কম বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দলের প্রয়োজনে এবং মানুষের কল্যাণে কখনও আপোষ করেননি। তাঁর সংগ্রাম ও বর্ণাঢ্য রাজনীতি থেকে শিক্ষা নিয়ে শোককে শক্তিতে পরিণত করব এটাই হোক আজকের শোক সভার মূল কথা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, নুরুল আলম চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাহসী, অকুতোভয়, আপোষহীন যোদ্ধা ছিলেন। তিনি সুদিন কিংবা দুর্দিন নীতি, আদর্শে, আওয়ামী লীগের পক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ন্যূনতম আপোষ করেননি। তিনি ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগ করেছেন, দলের দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ করছেন। কোনো সুবিধা-ভোগ আচরণ তার মধ্যে ছিলনা, শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেছেন তিনি। তাঁর জীবন সংগ্রামকে ধারণ করে আমরা সামনে যে কোনো অবস্থাতেই জীবনের ঝুঁকি হলেও মুক্তিযুদ্ধের, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে কোনো ধরনের আপোষ করব না।

অনুষ্ঠানে নুরুল আলমের ছেলে রাহাত জিশান বলেন, আমার বাবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন, ওমানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বড় নেতা ছিলেন। আমি বাবাকে বলতাম এত সব দায়িত্বের মাঝে তোমার প্রিয় কোনটি। তিনি বলেছিলেন, আই বঙ্গবন্ধুর সংসদ, আবার কো (আমি বঙ্গবন্ধুর সংসদ, আবার বল আমি বঙ্গবন্ধুর সংসদ) ১৯৭৩ সালে দেশের বাহিরে যাওয়ার ভালো অফার সত্ত্বেও তিনি যাননি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তুমি চলে গেলে ফটিকছড়ি কে দেখবে? রাহাত বাবার জন্য স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমার বাবাকে একদিনের জন্য না হয়ে ৩৬৫ দিন স্মরণ করা হউক।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় ও নগর আওয়ামী লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি মাহতাব উদ্দিন শোকসভার সভাপতিত্ব করেন। এতে অন্যান্যদের মধ্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সভাপতি এম এ সালাম বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, নুরুল আলম  ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৯৭৩ সালে ২৭ বছর বয়সে তিনি প্রধমবারের মতো সংসদ্য সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) উপজেলা থেকে পরপর দুবার সংসদ সংসদ্য নির্বাচিত হন। ওমানের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২৭ জানুয়ারি ভোর সোয়া পাঁচটায় নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। শুক্রবার (১লা ফেব্রুয়ারি) তাঁর স্মরণে প্রথম শোক সভায় আয়োজন করে দলটি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর