গেন্ডারিয়ায় খানাখন্দে ভরা সড়ক, জন ভোগান্তি চরমে

, জাতীয়

রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-09-09 17:48:00

খানা খন্দে ভরা দয়াগঞ্জ মোড় থেকে গেন্ডারিয়া যাবার নতুন সড়কটি। প্রায় দুই দশক আগে নির্মাণ হলেও অর্ধ দশক ধরে রাস্তাটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে আছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এনিয়ে নানা ব্যক্তি ও সরকারি দফতরে ধর্না দিয়েও পাচ্ছেন না প্রতিকার।

সরেজমিনে গিয়েও পাওয়া গেছে এর সত্যতা। রাস্তার একটি পাশ যানবাহন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত থাকলেও বাকি অংশটি নানা দোকানপাট, ট্রাক, লেগুনা পার্কিং ও রিকশার গ্যারেজ করে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

এদিন দেখা যায়, দয়াগঞ্জ রেল পারাপারের রাস্তার একপাশে দিয়ে চলছে যানবাহন, অন্যপাশটি মাটি ফেলে সমান করা হচ্ছে। রোড ডিভাইডারটি ঠিক করতেও কাজ করছে কয়েকজন শ্রমিক। এই কাজটি করছে ঢাকা থেকে যশোর নির্মানাধীন রেললাইনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার আওতায় শুধু রেললাইন পারাপার হবার অংশটুকুর কাজ হবে বলে জানায় এসময় কর্মরত শ্রমিকরা।

রেললাইন পারাপার হবার অংশটুকুর কাজ করছে শ্রমিকরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

রেললাইনের সঙ্গে লাগোয়া এই সড়কটির রেললাইন ঘেষা লেনটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং, ময়লা, দোকান ও রিক্সার গ্যারেজ দিয়ে। আরেকটি লেন উম্মুক্ত থাকলেও সেটি হলো খানাখন্দে ভরা। কোথাও কোথাও থেকে পিচ সরে গিয়ে এই পথের অস্তিত্বও বিলুপ হয়ে গেছে। সে জায়গাগুলোতে মাটি ফেলে করা হচ্ছে যান চলাচলের উপযোগী করার জন্য।

যানবাহন চলাচলের উম্মুক্ত পাশটি যে শুধুই যানবাহন চলাচলের জন্য ব্যবহার হচ্ছে তা নয়। বরং রাস্তার অনেকটা অংশ দখলে রেখেছেন পাশে থাকা বিভিন্ন দোকান মালিকেরাও। সেখানে রিক্সা ঠিক করা থেকে, মোটরসাইকেল মেরামত, দরজার গ্রিল তৈরি সহ নানা কাজে সড়কটিকে দখলে রেখেছেন তারা।

জানা যায়, প্রতিদিন চকবাজার ও বাদামতলীর পাইকারি বাজারে চলাচল করার জন্য পণ্যবাহী শত শত ট্রাক সড়কটি ব্যবহার করে। নদীর ওপারের মানুষ ও গেন্ডারিয়ায় বসবাসরতদের সায়দাবাদ হয়ে ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রেও এই সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে সড়কের অনেকাংশ দখল ও খানাখন্দ হয়ে থাকায় দ্রুতগতিতে চলতে পারে না কোনো যানবাহনই।

এছাড়া বৃষ্টি হলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সড়কটি। খানা খন্দে ভরা এই সড়ক তখন রূপ নেয় ভয়াল জলসমুদ্রে। জায়গায় জায়গায় গর্ত থাকায় যানবাহন চলাচল হয়ে পড়ে অসাধ্য তাই বাধ্য হয়েই অনেকটা ঘুরে সড়ক ব্যবহারকারীদের যেতে হয় নিজ নিজ গন্তব্যে।

খানাখন্দে ভরা এই সড়ক দিয়ে লেগুনায় করে গুলিস্তান থেকে গেন্ডারিয়ায় আসা রিপন বার্তা২৪.কম কে বলেন, নানা কাজেই এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। আজ বাবাকে নিয়ে এক কাজে গুলিস্তান গিয়েছিলাম। এখন আসতে আসতে রাস্তার এমন অবস্থায় কোমর ব্যথা হয়ে গেছে। লেগুনার স্ট্যান্ডে ধরে রেখে হাতও ব্যথা হয়ে গেছে।

প্রায় ২০-২২ বছর ধরে এই এলাকায় লেগুনা চালান মোহাম্মদ রমজান খান। সড়কটি শেষ কবে ভাল দেখেছেন মনে করতে পারলেন না তিনিও। কতক্ষণ স্মৃতি হাতরিয়ে বললেন, অনেক দিন ধরেন তো রাস্তার অবস্থা খারাপ। কিন্তু কেউ তো কাজ করতে আসে না।

এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিনের ভোগান্তির কথা জানিয়ে মোহাম্মদ রমজান খান বার্তা২৪.কম কে বলেন, বর্তমানে খুব কঠিন (খারাপ) অবস্থায় আছে, বৃষ্টি হইলে এই এলাকায় মানুষ বাস করতে পারে না এমন পরিস্থিতি হয়। খুবই খারাপ অবস্থা। আমাদের দোলাইপাড় দিয়ে ঘুরায়া যাইতে হয়।

তিনি আরও বলেন, ৫ তারিখের পরে ছাত্রদের নিয়া আমরা সেনাবাহিনীর কাছে বলার পরে গতকাল থেকে মাটি দিয়ে খালি সমান করতেছে। কোমর পর্যন্ত ভাঙ্গা, দুনিয়ার পানি। পল্টি খাইয়া কত গাড়ি নষ্ট হইয়া পইরা রইছে। এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টি আইলে একটা রিক্সাও এই এলাকা (সড়ক) দিয়ে যাইতে পারে না।

বৃষ্টির পানি জমে আছে রাস্তায়, ছবি: বার্তা২৪.কম

এই অভিযোগ শুধু রিপন বা রমজান খানের একার নয়। বরং এই সড়কে চলাচলকারী প্রতিটি ব্যক্তির অভিযোগ একই। ঢাকার মধ্যে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের বেহাল দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি, দ্রুত সড়কটি ঠিক করতে যেনো যথাযত ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ।

দোলাইপাড় হাই স্কুলের শিক্ষার্থী আসিফ। তার বাসা নদীর ওপারে হাসনাবাদ এলাকায়। এই সড়ক ব্যবহার করেই প্রতিদিন যেতে হয় স্কুলে। তবে রাস্তার বেহাল দশায় যাতায়াতে সমস্যা হয় তার। এই নিয়ে গেন্ডারিয়া থেকে লেগুনায় উঠার সময় কথা হয় তার সঙ্গে।

আসিফ বার্তা২৪.কম কে বলেন, ভাঙ্গা রাস্তা, ধুলাবালিতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। কাপড়চোপড় ময়লা হয়ে যায়, চুল আঠা আঠা হয়ে যায়। ঝাকি খাইতে খাইতে জীবন শেষ। কিন্তু রাস্তা ঠিক হচ্ছে না, জানিও না কবে ঠিক হবে। কিন্তু স্কুলে তো যেতেই হয়। এইভাবেই যাই।

জনভোগান্তি লাগবে সড়কটি কবে ঠিক করা হবে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন বার্তা২৪.কম কে বলেন, পদ্মা রেলের কাজ রেলওয়ে করেছে। তারা এই কাজ করার সময় রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সে কারণে তারাই এটি ঠিক করে দিবে। ইতোমধ্যে পদ্মা রেললাইনের পিডির সাথে আমাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কথা হয়েছে, তারা বলেছে দ্রুতই রাস্তাটি তারা ঠিক করে দিবে।

কতটুকু ঠিক করবে এমন প্রশ্নের জবাবে এই প্রকৌশলী বলেন, পুরো রাস্তাটাই তারা ঠিক করে দিবে। ইতোমধ্যে তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমাদের তারা জানিয়েছে, আগামী এক মাসের মধ্যেই চলাচলের উপযোগী করে তুলবে সড়কটি।

সড়কের অনেকাংশ দখল হয়ে আছে, দখলমুক্ত করতে কি ব্যবস্থা নিবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, আমাদের সড়কের জায়গা যেটুকু আছে সেটুকু দখলমুক্ত করতে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন, জনগণের চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দিতে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর