লক্ষ্মীপুরে অস্ত্র জমা দেননি তাহের পুত্র টিপু

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2024-09-09 22:46:19

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গত মঙ্গলবার। নির্ধারিত সময়ে জেলার ৩৪টি লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের মধ্যে ৩৩টিই জমা পড়েছে। কিন্তু শেষদিন রাত ১২টা পর্যন্ত বাকি অস্ত্রটি জমা পড়েনি। এটি সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা যুবলীগ সভাপতি এ কে এম সালাহ্ উদ্দিন টিপুর। তিনি আলোচিত লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে।

লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর সাবেক যুবলীগ নেতা একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু অনবরত গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। পৃথক দুটি হত্যা মামলায় তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও টিপু তার অস্ত্র জমা দেননি।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জে এম শাখার তথ্যমতে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরে জেলা প্রশাসন ব্যক্তিমালিকানা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করে ৩৫টি। এসব লাইসেন্সের বিপরীতে ৩৪টি আগ্নেয়াস্ত্র কেনা হয়। আলাউদ্দিন দিদার নামে এক ব্যক্তি লাইসেন্স নিলেও তিনি অস্ত্র ক্রয় করেননি। ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকাসহ জেলার বিভিন্ন থানায় ২৭ জনের নামে লাইসেন্সকৃত ৩৩টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে। জমা পড়া অস্ত্রের মধ্যে পিস্তল ১৫টি, শটগান ১৬টি, বন্দুক ১টি ও রাইফেল ১টি। জমা পড়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ১টি ও রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আ ক ম রুহুল আমিনের ২টি অস্ত্র রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে হামলা-সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওইদিন প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে যুবলীগ নেতা টিপুসহ তার লোকজন ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। ওইদিন ৪ শিক্ষার্থী গুলিতে নিহত হয়। এছাড়া আরও ৮ জন পিটুনি ও সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যায়। গুলিবিদ্ধ ও হামলায় শতাধিক ছাত্র-জনতা আহত হয়। ছাত্র-জনতার ওপর টিপুর গুলিবর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

১৪ আগস্ট রাতে গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আল আসাদ আফনান পাটওয়ারীর মা নাছিমা আক্তার ও নিহত সাব্বির হোসেন রাসেলের বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। দুটি মামলাতেই টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া ৪ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ও কাজে বাঁধা দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশের দায়েরকৃত ওই মামলাতেও টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়। ছাত্র-জনতার দেওয়ার আগুনে টিপুর দুটি বাসভবন পুড়ে যায়। ওইদিনই টিপু পালিয়ে যায়। তিনি কোথায় আছেন তা কেউই বলতে পারছেন না। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের পদধারীরাও আত্মগোপনে রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইসেন্সের বিপরীতে কেনা ১টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েনি। এখন ওই অস্ত্রটি অবৈধ হয়ে গেছে। এ কারণে অস্ত্রের লাইসেন্সকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে মাঠে নেমেছে যৌথবাহিনী। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারির আগে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নিয়ে মন্ত্রণালয় এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর