পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নীরবতার দিন শেষ। সমস্যা সামাধানে উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে। সরকারের চশমা দিয়ে নয়, জনগণের চশমা দিয়ে সমস্যাগুলো দেখার জন্যই এখানে এসেছি। স্থানীয় জনগণ কেমন সমাধান চায়, সে কথা শুনে তাদের চাওয়া অনুযায়ী সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে ফেনীর পরশুরামের নিজ কালিকাপুর এলাকায় বন্যায় ভাঙন কবলিত বল্লামুখা বাঁধ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রতিবেশী দেশ থেকে একটি বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন যৌথ নদী কমিশন ও নীতিনির্ধারণী মহলের সঙ্গে বসে এ ক্ষতির কথা তুলে ধরব।
উপদেষ্টা বলেন, উজানের দেশ ভারতের সঙ্গে শুধুমাত্র এ নদী কেন্দ্রিক সমস্যা এমন নয়, প্রায় সবগুলো নদী নিয়েই সমস্যা। আমাদের ৫৪ বা ৫৭টি অভিন্ন নদী রয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারিনি। তিস্তা নিয়েও পারিনি।
তিনি বলেন, নীরব থাকার সময় শেষ হয়ে গেছে। সরকারি পর্যায়েও যদি নিরবতা বা নিষ্ক্রিয়তা থাকে, সেদিনও শেষ হয়ে গেছে। একটি কথা মাথায় রাখতে হবে নদীর পানি কেবলমাত্র রাজনীতি না, এটি কূটনৈতিক সেই সঙ্গে অর্থনীতিও। এজন্য আমাদের মানুষের কথা, দুর্ভোগ ও প্রত্যাশা বুঝতে উজানের দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলতেই এখানে আসা।
আন্তর্জাতিক আইনের স্বাক্ষর করার সুফল তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা যদি আন্তর্জাতিক আইনে স্বাক্ষর করি, তাহলে এ আইনের নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কথা বলা অনেক বেশি সহজ হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সব মহল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। ভবিষ্যতে চুক্তির ব্যাপারে দুই দেশকে স্বাক্ষর করতে হবে। দরকষাকষি করে আমাদের অনুকূলে চুক্তি পেলে তাতে আমরা স্বাক্ষর করতে রাজি থাকব।
পানিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এর আগে তিস্তা চুক্তির খসড়া হয়ে যাওয়ার পরেও তারা (ভারত) স্বাক্ষর করেনি। এখন আমাদের মানুষের দাবিগুলোকে তাদের ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে উপস্থাপন করতে পারি। এতদিন সেগুলোও কার্যকরভাবে হয়নি। তিস্তা নদী নিয়ে কি হচ্ছে সেই ব্যাপারেও এতদিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানতেন না। তারা শুধু জানত বাংলাদেশে কেবল একটি বন্যা হয়েছে। কিন্তু এ বন্যায় যে আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারতাম, ২৯ জন মানুষের প্রাণহানি আটকাতে পারতাম- এ বিষয়গুলো উজানের দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও বলতে হবে।
এদিন সাম্প্রতিক বন্যায় ভাঙন কবলিত স্থানসমূহ পরিদর্শন শেষে দুপুরে জেলার সোনাগাজী মুহুরী রেগুলেটর পরিদর্শন ও বিকেলে ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সাম্প্রতিক বন্যায় ভাঙন ও করণীয় বিষয়ে আয়োজিত গণশুনানিতে অংশ নেবেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এ সময় পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান, ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার, পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান, বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।