গণঅভ্যুত্থানে নিহত-আহত শ্রমিকদের তালিকা প্রণয়ন, ক্ষতিপূরণ, শ্রমিকদের মজুরি, আইন, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, আউট সোর্সিং বন্ধ, শ্রমিক ছাঁটাই-নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ সহ ১০ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ছাত্র শ্রমিক জনতার বিপুল আত্মত্যাগ ও অংশগ্রহণে এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে গত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকার পদত্যাগ ও দেশত্যাগ করেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শ্রমজীবীদের মধ্যে এমন এক উদ্দীপনা তৈরি করেছিল যে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, জীবন ও রক্ত দিয়েছে, আহত হয়েছে। কারণ শ্রমিকেরা তাদের জীবন দিয়েই বুঝতে পারে বৈষম্যের বেদনা ও অপমান কত গভীর। গত ১৫ বছর তারা উন্নয়নের বয়ান শুনেছে কিন্তু নিজেদের জীবনে উন্নতির ছোঁয়া লাগেনি। মূল্যস্ফীতির সাথে মজুরির সমন্বয় হয়নি ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে আর প্রকৃত মজুরি কমেছে। জিডিপি, রপ্তানি আয় বেড়েছে অথচ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরা থেকেছে উপেক্ষিত। এই উপেক্ষা ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির আশা দেখেছে তারা আন্দোলনের মধ্যে।
বাংলাদেশ এক অর্থে শ্রমজীবী মানুষের দেশ। শ্রমজীবীরাই দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। ৭ কোটি ৩৬ লাখ শ্রমশক্তির এই দেশে শ্রমিকরা যদি দক্ষতা অর্জন করে এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারে তাহলে দেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হবে। কৃষি, শিল্প, সেবা, প্রবাসী সকল খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব।
এসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন বক্তারা। দাবিসমূহ-
১। গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত শ্রমিকদের তালিকা প্রণয়ন, ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন ও বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রতিবছর মজুরি পুনঃনির্ধারণের পদ্ধতি চালু করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য রেশন দরে পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। শ্রম আইনের শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী অগণতান্ত্রিক ধারাসমূহ বাতিল করতে হবে, ইপিজেড এর জন্য আলাদা আইন নয়, সারাদেশে একই ধরনের আইন চাই।
৪। স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে আউট সোর্সিং প্রথা বাতিল করে শ্রমিকদের চাকুরির নিশ্চয়তা দিতে হবে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে হকার উচ্ছেদ করা যাবে না। ব্যাটারি চালিত যানবাহনের আধুনিকায়ন ও লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। সকল ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার দিতে হবে। গৃহকর্মী, হালকা যানবাহন চালক, প্লাটফর্ম ইকোনমির সাথে যুক্ত শ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৬। শ্রমিকের মজুরি নিয়ে হয়রানি, শ্রমিক ছাঁটাই ও শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। নারী শ্রমিকদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৭। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাসহ সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা স্কিম চালু করতে হবে।
৮। প্রাতিষ্ঠানিক অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল শ্রমিকের জন্য পেনশন প্রথা চালু করতে হবে।
৯। সিন্ডিকেট বন্ধ করে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রবাস গমন ব্যয় কমানো ও সহজ করা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১০। আধুনিক শিল্প ও চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ রাষ্ট্রীয়ভাবে নিতে হবে।
মানববন্ধনের সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজামান রতন, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন সহ অন্যান্য।