আদিবাসী-সেটলার, পাহাড়ি-বাঙালি বিভাজন বন্ধ করতে হবে এবং সকলের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) কেন্দ্রীয় নেতারা।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর বিজয়নগরে অবস্থিত সায়হাম স্কাই ভিউ টাওয়ারে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা ও করণীয় বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ দলের পক্ষ থেকে এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, এবি পার্টি মনে করে আদিবাসী-সেটলার শব্দচয়ন মোটেই যৌক্তিক না; ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান বা নৃবিজ্ঞান কোনটাই এ ধরনের সম্পর্ক সমর্থন করে না। আমরা সকলকে বাংলাদেশী, পার্বত্য চট্টগ্রামবাসী হিসেবে বিবেচনা করি, সাথে সাথে সকলকে নৃতাত্বিক জাতি হিসেবে মর্যাদা দেই। তাই বাঙ্গালীদের মিছিলে গুলি, মধ্যরাতে ডেকে নিয়ে চুরির অপবাদে পিটিয়ে হত্যা, পরবর্তীতে দাঙ্গা ও চাকমা সম্প্রদায়ের তিনজনসহ সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এবি পার্টি পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানের জন্য ন্যায় কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করছে এবং একই সাথে জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ সংরক্ষণ করা, যার সাথে কোন আপস করা যাবে না। দ্রুততম সময়ে গঠিত ন্যায় কমিশন' সকল পার্বত্য চট্টগ্রামবাসী যে নিপিড়নের শিকার হয়েছে, রাষ্ট্রীয় বা বেসামরিক ব্যক্তি বা সংস্থা দ্বারা, তার সত্য অনুসন্ধান ও উদঘাটন করবে। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে দক্ষিন আফ্রিকা, সিয়েরালিওন, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়ার অভিজ্ঞতার সম্মিলনে একটি রূপরেখা প্রদান করবে।
তিনি বলেন, অপরাধী বাঙ্গালি-উপজাতি, হিন্দু-মুসলমান যেই হোক না কেন, তাঁকেই ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দেশের নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করা হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব। সেটা যেন কোন অবস্থাতেই অগ্রাধিকারের বাইরে চলে না যায়, সেই ব্যাপারে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সতর্ক করছি।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, পাহাড়ে স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠায় পূর্বের সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত হচ্ছে এর রাজনৈতিক সমাধানের জন্য সকল পক্ষকে কমিউনিটি লেভেলে অংশগ্রহনের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংহতি ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার যে নীতিগত প্রয়োজন আছে তা পুরণ করা। নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় তাদের প্রতি সংবেদনশীলতা বজায় রেখে একই সাথে রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোন অবস্থায়ই কারো মানবাধিকার রক্ষার ঘাটতি না হয়। বিদেশী ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে যেমন সতর্ক থাকতে হবে তেমনি নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানবিধকার নিশ্চিত করার মধ্যে দিয়ে, বিশ্বব্যাপি যেসকল গ্রহণযোগ্য কনভেনশন আছে, তার আলোকেই কাজ করতে হবে বলে মনে করে এবি পার্টি।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ১৯৯৭ সালে যে শান্তিচুক্তি করা হয়েছে সেটা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে বিভাজনের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই শান্তিচুক্তিকে পরিবর্তন করতে হবে। শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারার আমুল পরিবর্তন করতে হবে। একটি কমিশন গঠন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক প্রফেসর ডাঃ মেজর (অবঃ) আব্দুল ওহাব মিনার, বিএম নাজমুল হক, লে. কর্ণেল (অবঃ) দিদারুল আলম, লে. কর্ণেল (অবঃ) হেলাল উদ্দিন, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এবিএম খালিদ হাসান ও মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন প্রমুখ।