রাজবাড়ীর আলোচিত ৫ হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিং করেছেন জেলার পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর পাংশা থানার পাট্টা ইউনিয়নের বিলমন্ডব এলাকায় বসবাসরত এজাহারনামীয় আসমি রতন খাঁ তার স্ত্রী চামেলীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং চামেলীর মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর নিহত চামেলীর বাবা মোঃ আ. মালেক মণ্ডল বাদী হয়ে পাংশা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। নিহত চামেলীর সুরতহাল রিপোর্ট দেখে পুলিশের সন্দেহ হলে একমাত্র এজাহারনামীয় আসামি রতন খাঁকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। সে আদালতে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
অপরদিকে, গত ২১ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টায় কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া গ্রামে ট্রান্সফরমার মাথায় করে পালানোর সময় এলাকাবাসীর হাতে গণপিটুনির শিকার হন নাজমুল। এ সময় তার সঙ্গে থাকা নিকটাত্মীয় নজরুল কাজীসহ অপর একজন পালিয়ে যান। পালাতে না পেরে লোকজনের হাতে ধরা পড়েন নাজমুল। গণপিটুনিতে নাজমুল গুরুতর আহত হলে স্থানীয় কয়েকজন ভ্যানে করে তাকে কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের সামনে ফেলে যান। নাজমুল মোল্লা সেখান থেকে নিজে হেটে গিয়ে জরুরি বিভাগে যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন দুপুরে তিনি মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনায় ২১ সেপ্টেম্বর রাতেই নাজমুলের স্ত্রী আন্না বেগম বাদী হয়ে ১০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে কালুখালী থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই ঘটনায় ভিডিও ধারণকারী মূল ব্যক্তি ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সালাম দরিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। নিহত নাজমুল একজন পেশাদার চোর ছিলেন। তার নামে ডাকাতি ও চুরি সহ ১১টি মামলা রয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও জানায়, গ্রেফতার সালাম দরি ২০২৪ সালের ১৮ মে একটি মারামারি মামলা চার্জশীটভুক্ত আসামি। ২০০৬ সালের আরেকটি মারামারির মামলা রয়েছে তার নামে।
অন্যদিকে গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের কাটাখালি এলাকার এমদাদুলের চায়ের দোকানের পাশে দুর্বৃত্তরা চরমপন্থী নেতা সুশিলকে গুলি করে ও কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। পরে সুশিলের ভাই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সুশিলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সুশীল একজন চরমপন্থী দলের এই অঞ্চলের নেতা ছিলেন। তার নামে গোয়ালন্দঘাট থানায় হত্যাসহ অস্ত্র আইনের সাতটি মামলা রয়েছে। তিনি ইতোপূর্বে ৫ বছর জেলও খেটেছেন। হত্যাকাণ্ড ঘটনার সংবাদ পাওয়া মাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। ভিকটিমের ভাই সুনীল সরকার বাদী হয়ে গোয়ালন্দঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় গোয়ালন্দঘাট থানা পুলিশ জনি নামে একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। তার নামে দুটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র আইনে মামলা এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সবুজ মার্ডার মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি জনি।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজবাড়ীর রামকান্তপুর ইউনিয়নের মাটিপাড়া গ্রামে মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে শ্বাসরোধ করে বন্যা খাতুন (৩০) নামে এক গৃহবধূকে হত্যা করে তারই স্বামী মোঃ রশিদ শেখ (৩২)। ঘটনার পর নিহতের স্বামী রশিদ শেখকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মোঃ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা করলে পুলিশ রশিদকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় রশিদ ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক আদালতে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
এছাড়াও গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের পূর্ব ভবদিয়া গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে
নিখোঁজের দুই দিন পর মিনহাজুল শেখ (১২) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটি দুইদিন নিখোঁজ থাকায় তারা বাবা থানায় জিডি করেছিলো।
জানা গেছে, মিনহাজ শেখ পার্শ্ববর্তী এলাকার মুক্তার সর্দারের বাগানে মাল্টা খাওয়ার লোভে বাগানে প্রবেশ করতে যায়। কিন্তু মুক্তার সর্দার তার বাগান কাঁটাতারের বেড়া ও বিদ্যুতায়িত করে রাখে। শিশুটি সেই বাগানের বেড়ার বিদ্যুতের তারের সাথে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়। পরবর্তীতে মৃত দেহ মুক্তার সর্দার ও তার সহযোগীরা ধানক্ষেতের মাঝখানে ফেলে রেখে দেয়। এ ঘটনায় বাগানের মালিক ও দারোয়ানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে। আসামিরা পলাতক আছে। গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম এন্ড অপস্) মুকিত সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরীফ আল রাজিব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান সহ জেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।