আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে ডেঙ্গু, সতর্ক থাকার পরামর্শ

, জাতীয়

রাসেল মাহমুদ ভূঁইয়া, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-10-03 23:16:25

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝে মাঝেই বৃষ্টি হচ্ছে। এতে এখানে-সেখানে জমছে পানি। এসব জমানো পানিতেই ডেঙ্গু মশার প্রজনন ঘটছে দ্রুত গতিতে। জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে এডিস মশার প্রজননের সম্ভাবনা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

চলতি বছরের গেল ৯ মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১শ ৬৩ জন। এসময় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৯শ ৩৮ জন। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেছে ৮০ জনের। কেবল ওই মাসেই ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৯৭ জনের।

দিনদিন হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে তুলনায় অক্টোবরে এডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ আরও বাড়বে। সে কারণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম, জুলাই-আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। এখন সেটাই ঘটছে!

দেশের আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এখন ডেঙ্গুর ধরনেও পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করলেও এখন সব ধরনের পানিতেই বংশ বিস্তার করছে। ফলে, দিনদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।

ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু রোগীরা

 অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে জানিয়ে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, তখনই ডেঙ্গু বেড়ে যায়, যখন ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন এবং জীবনযাপনের উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি হয়।

ডা. লেলিন বলেন, বাংলাদেশে এবার বর্ষা (বৃষ্টি) এসেছে দেরি করে। এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, পানি জমছে। ফলে, ডেঙ্গুর প্রজননের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এতদিন যে কার্যক্রম পরিচালিত ছিল, সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে তা অনেকটা অকেজো হয়ে গেছে। ফলে, স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে মশক নিধনের যে কার্যক্রম ছিল, তাও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

অক্টোবরে আরও বাড়তে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৯ মাসের মধ্যে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে সেপ্টেম্বরে। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেছে ৮০ জনের। একইসঙ্গে এসময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৮ হাজার ৯৭ জন।

অন্যদিকে, আগস্ট মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ৬ হাজার ৫শ ২১ জনের। ওই মাসে ২৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর জুলাইয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ৬শ ৬৯ জনের এবং মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।

এদিকে, চলতি বছরে বিগত মাসগুলোর তুলনায় সেপ্টেম্বরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসি) হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে।

হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) কর্তৃপক্ষ বলছে, বিগত মাসগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ খুব একটা না থাকলেও সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই বেড়েছে এডিস মশাবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে ২০ থেকে ৪০ বছরের বয়সীদের সংখ্যা বেশি। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকার লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, সাভারের মানুষের সংখ্যাই বেশি।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগীরা ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ শতাংশ নারী।

এছাড়া ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ১শ ৬৩ জনের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ এবং পুরুষের সংখ্যা ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যুহার বেশি।

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম হাসিবুল ইসলাম বলেন, দিনদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২শ ৭০ জন। এসময় ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৮ জন। সে তুলনায় অক্টোবরে এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর বেশিভাগ কারণ রোগীদের অসচেতনতা বলে মনে করছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়া অনেক রোগী এ রোগকে স্বাভাবিক মনে করে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে থাকেন। রোগীর অবস্থা যখন সংকটজনক হয়ে যায়, তখন তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ফলে, তারা মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছেন। যদি তারা ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর পরই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেন, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি হতো না।

ডা. হাসিবুল ইসলাম বলেন, আমার পরামর্শ থাকবে, কারো যদি পেটব্যথা, শরীরব্যথা কিংবা জ্বর হয়, তাহলে আপনার ফার্মেসির কোনো ওষুধ খাবেন না। দ্রুত হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিন। যদি হাসপাতালে না আসেন, তাহলে অন্তত একজন এমবিবিএস ডাক্তার দেখান, পরামর্শ নিন। ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় ভর্তির প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসায় থেকেও সুস্থ হওয়া যায়।

ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়া এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা) দায়িত্ব পালনে অবহেলাকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা।

মুগদা হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাসিবুল ইসলাম বলেন, মুগদা অঞ্চলে অবস্থা এমনিতেও নাজুক। সবসময় পানি জমে থাকে। সিটি করপোরেশনের লোকজন এখন নেই বলতে গেলে। কাজও খুব একটা হচ্ছে না। গত এক মাস ধরে তাদের কোনো কার্যক্রম আমার চোখেই পড়েনি। ফলে ডেঙ্গুর প্রকো বাড়ছে, মশাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এদিকে বৃষ্টিও বন্ধ হচ্ছে না, থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। টানা বৃষ্টি হলেও ডেঙ্গু এত বিস্তারলাভ করতে পারতো না। আমাদের হাসপাতালের সামনেই গত দুই সপ্তাহ যাবত হাঁটুপানি জমে আছে। এদিকেও কেউ নজর দিচ্ছে না। এত সমস্যার ভেতর কেউ আশা করতে পারেন না ডেঙ্গু কমবে।

হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা অন্যান্য রোগীদের তুলনায় অনেক বেশি। রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলেই কেবল তারা ডাক্তারের কাছে আসছেন। ফলে, ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করার কারণে ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। আগে ডেঙ্গু রাজধানীকেন্দ্রিক থাকলেও বর্তমানে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে ড. কবিরুল বাশার বলেন, বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা শহরে এখন এডিস মশা আছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, বরগুনা, পিরোজপুর, ভোলাসহ বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে যখন কোনো রোগী অন্যান্য জেলায় গিয়ে অবস্থান করে, তখন তার কারণেও ডেঙ্গু রোগ ছড়াতে পারে।

তিনি বলেন, আগে একসময় বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা গেলেও এখন সারাবছরই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কোথাও পানি জমা থাকলে, পানির স্পর্শ পেলেই এ মশা সেখানে ডিম দিতে পারে, বংশ বিস্তার করতে পারে। তাই, বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ছোট বড় যে কোনো ধরনের পাত্রে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। কেননা, পানি পেলেই এডিস মশা সেখানে বংশবিস্তার করতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেঙ্গুবিষয়ক তথ্য বলছে, ২০০০ সালে দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের বড় প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সে বছর ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে প্রতিবছরই দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ রেকর্ড মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের। ওই বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১শ ৭৯ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া ২০২২ সালে ২শ ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৯ সালে মৃত্যু হয়েছিল ১শ ৭৯ জনের, ২০২০ সালে ৭ জন এবং ২০২১ সালে মৃত্যু হয় ১শ ৫ জনের।

রোগী এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মনে করেন, হাসপাতালে ভর্তি হলেই প্রচুর খরচ। এই ভয়েই শুরুতে হাসপাতালে আসতে আগ্রহবোধ করেন না তারা।

ফলে দেখা যায়, কোনো কোনো পরিবারের একসঙ্গে ২ থেকে ৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা বাবদ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে। এই ব্যয় সংকুলান করতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডেঙ্গুর ভয়াবহ এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও মনে করছেন তারা।

২শ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, এক সময় এডিস মশা ভোরবেলায় কিংবা দিনের বেলায় কামড়ালেও এখন ২৪ ঘণ্টার যে কোনো সময়েই আক্রমণ করতে পারে। তাই, সবসময় মশারি, কয়েল, স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি পরিবারের কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

এদিকে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ঢাকা উত্তর সিটি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বার্তা২৪.কমকে বলেন, কমিটি গঠনের ব্যাপারে চিঠিটা পেয়েছি। আমাদের টিম নিয়ে খুব দ্রুতই বৈঠকে বসে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবো। তাদের থেকে আমরা পরামর্শ নেবো। খুব শিগগিরই আমরা সে অনুযায়ী কাজ শুরু করবো।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডিএসসিসি’র চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, জানুয়ারির শুরু থেকেই আমাদের মশক নিধন কার্যক্রম চলছে। ১৫ জুলাই থেকে আমরা কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমের মনিটরিং শুরু করেছি। এখনো আমাদের প্রতিটা ওয়ার্ডে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এ তিন মাসে আমরা ১শটিরও বেশি চিরুনি অভিযান পরিচালনা করেছি।
এছাড়া আমাদের অন্যান্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রতিদিন আমাদের মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা না করা এবং মানুষের অসচেতনতার ফলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে।

দেশে জুন-জুলাই থেকে শুরু করে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি দেখা যায়। তাই, এসময়টাতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিদেরা।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বার্তা২৪.কমকে বলেন, যারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন, তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ঠিকানা ধরে ধরে ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বা ‘হট জোন’ নির্বাচন করবেন এবং সেসব জায়গায় ডেঙ্গু নিধনে কার্যক্রম পরিচালনা করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় তারা প্রতিটা বাসা ধরে ধরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমাদের দেশেও যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে, সেসব এলাকাকে টার্গেট করে যদি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে ডেঙ্গু অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু তথা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে এখনো জাতীয়ভাবে কোনো কর্মসূচির পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়নি।

এডিস মশাবাহিত এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে জাতীয়ভাবে এমন কর্মসূচির প্রণয়ন করতে হবে, যেটাতে কেন্দ্রীয় সরকার, স্থানীয় সরকার এবং জনসাধারণকে যুক্ত করে একযোগে সারাদেশে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর