রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার স্বপ্নধারা হাউজিং এলাকার বাসিন্দা সাগরিকা আক্তার। পেশায় গণমাধ্যমকর্মী। পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ফিরছিলেন। বাসার ঠিক সামনেই অস্ত্রধারী একদল কিশোরের সামনে পড়ে যান। অস্ত্রধারীরা সাগরিকাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করে। এরপর ব্যাগে থাকা টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়।
শুধু সাগরিকা নন, গতকাল বুধবার রাত ৮টার দিকে স্বপ্নধারা হাউজিংয়ের ১ নম্বর রোড থেকে শুরু করে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অস্ত্রে মুখে ছিনতাই করে একদল সশস্ত্র কিশোর ও তরুণ। তারা অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন পথচারীর টাকাপয়সা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এমনকি অন্তত দুজন নারীকেও মারধর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ১৬ থেকে ২০ বছরের ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল হাউজিংয়ের এক মাথা দিয়ে ঢুকে আরেক মাথা দিয়ে বের হয়েছে। এই সময় অস্ত্রের মুখে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জনের সর্বস্ব লুট করেছে। কেউ টাকাপয়সা ও মোবাইল দিতে না চাইলেই করা হয়েছে মারধর।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মোহাম্মদপুর থানার স্বপ্নধারা হাউজিং এলাকা ১ নম্বর রোডে কথা হয় সাগরিকাসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো এলাকার সড়কে কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই। রাত নামলেই অন্ধকারে অনিরাপদ হয়ে ওঠে এই হাউজিংসহ আশেপাশের এলাকা।
ছিনতাইয়ের শিকার ভুক্তভোগী দীপু বলেন, আমি ও নাঈম নামের একজন কাজ থেকে ফিরে রাত ৮টার দিকে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। এই সময়ে ৮ থেকে ১০ জন ছেলে আমাদের ঘিরে ধরে। চাপাতি ঠেকিয়ে আমাদের ব্যাগ, টাকা ও মোবাইল নিয়ে যায়। শুধু আমরা না, গতকাল রাতে রাস্তায় যাকে পেয়েছে তাকেই মারধর করে যা পেয়েছে সব নিয়ে গেছে। কোনো কথা বলার সুযোগ দেয় নাই।
তিনি আরও বলেন, ছিনতাইয়ের পরে সামনে দিকে দৌড়ে যায়। গিয়ে দেখি আমার মতো অনেকেই ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি এমন ৫ থেকে ৬ জনকে পেয়েছি। এরমধ্যে দুজন নারীকেও পেয়েছি।
ছিনতাইকারীদের মারধরে আহত হয়েছেন সাগরিকা। তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি বাসার সামনে আসতেই আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা ৮ থেকে ১০ লোক অস্ত্র ঠেকিয়ে বলে যা আছে বের কর। এরই মধ্যে একজন আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। আমার পিঠে চাপাতির উল্টো পাশ দিয়ে আঘাত করে। চড়থাপ্পড় মারতে থাকে। মারধরের এক পর্যায়ে আমাকে রাস্তার ময়লা পানির মধ্যে চেপে ধরে। আমি আরেকটু হলেই মারা যেতাম। এই অবস্থায় আমার ব্যাগে থাকা টাকা নিয়ে যায়। আমার সামনেই অন্তত আরও পাঁচজনকে ছিনতাই করে।
এই গণমাধ্যমর্মী আরও বলেন, শতশত মানুষের সামনে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। তারা নারীদেরও ছাড় দেয়নি। আমার সামনে আরও দুজন নারীকে মারধর করেছে। তাদেরও ব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে গেছে। সবার মুখেই মাস্ক ছিল।
স্থানীয় এক চা দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই এলাকায় প্রায়ই এভাবে ছিনতাই হয়। গতকাল রাতে ৮ থেকে ১০ জন ছেলে এসে দোকানের সামনে ঘিরে ধরে। সবার হাতে চাপাতি। মুখে কালো মাস্ক। তারা অস্ত্র ঠেকিয়ে বলে যা আছে দিয়ে দে। এভাবেই আমার দোকানের সামনে বসা এক কাস্টমারের দুইটা মোবাইল নিয়ে গেছে।
একইভাবে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় অস্ত্র ঠেকিয়ে দিনে দুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী দুই তরুণ পেশায় ডেলিভারিম্যান। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা উদ্যান ৫ নম্বর রোডে এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী মিরাজ বলেন, আমরা দুজন গোদরেজ কোম্পানিতে ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করি। দুপুরে ইত্যাদি জেনারেল স্টোরে মাল দেওয়ার সময় কয়েকজন আমাদের গলায় চাপাতি ধরে কাছে থাকা প্রায় ৪০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায়। এ সময় কেউ এগিয়ে আসেনি। সবাই দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছে।
এদিকে স্বপ্নধারা হাউজিংয়ে গণছিনতাইয়ের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান। তিনি বলেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ মামলা দেয়নি। ২৪ ঘণ্টা আমাদের পুলিশ কাজ করছে।
গতকাল অন্তত এই এলাকায় ২০ জন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে এমন তথ্য উল্লেখ করা হলে ডিসি রুহুল কবীর বলেন, ২০ জনের তথ্য সঠিক নয়। আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। আপনার এই তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না।