কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও দলীয় কার্যলয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ররিবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ও বিকালে উপজেলা শহরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজির হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান মুকুলের সমর্থকদের মধ্যে দুই দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
রবিবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময় পর্যন্ত উপজেলা শহর, নাওডাঙা পুলের পাড় এবং কদমের তল নামক স্থানে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র হাতে অবস্থান নেওয়ায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
বিএনপি নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উপজেলা শহরের উমেষ চন্দ্র ক্লাব নামে একটি ঘর আওয়ামী লীগের কব্জা থেকে দখলে নেয় উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজির হোসেনের সমর্থকরা। তখন থেকে তারা সাইনবোর্ড লাগিয়ে ওই ক্লাবঘরকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। রবিবার উপজেলা বিএনপি নেতা মোস্তাফিজার রহমান মুকলের বাবার মৃত্যুর খবরে তার জানাজায় অংশ নিতে যায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। জানাজায় অংশ নেওয়া নিয়ে উপজেলার নাওডাঙা পুলেরপাড় এলাকায় উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। সেখান থেকে ফিরে সভাপতি গ্রুপের কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের কার্যালয়ে অবস্থান নেন।
সভাপতি গ্রুপের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কার্যালয়ে অবস্থান করা অবস্থায় সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কয়েকজন নেতাকর্মী বিনা উষ্কানিতে তাদের ওপর হামলা চালায় ও কার্যালয়টি ভাঙচুর করে। এতে তাদের কয়েকজন আহত হয়।
সভাপতি গ্রুপের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার খবরে তার পক্ষের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে রবিবার বিকালের দিকে উপজেলা প্রশাসন চত্বরের সামনে অবস্থিত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নানের নিয়ন্ত্রণাধীন দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়। এতে দুই পক্ষের নেতাকর্মীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন। চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি সভাপতি নজির হোসেনের সমর্থক সামছুজ্জামান হাসু বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ার আওয়ামীলীগের কিছু লোকজন কে দলে অন্তর্ভুক্ত করায় বিবাদসৃষ্টি হয়েছে । তারা আমাদের ওপর হামলা চালায় ও পার্টি অফিস ভাঙচুর করে। আমাদের ৩ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান মুকুল বলেন, সভাপতি নজির হোসেনের সমর্থকরা অতর্কিতভাবে পার্টি অফিস ভাঙচুর করেছে। তারা প্রথমে আমাদের নেতাকর্মীকে ঘরের ভিতর আটক করে রাখে। পুলিশ গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে। তাদের মারপিটে ৫ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজির হোসেনের সাথে রবিবার সন্ধ্যায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি ) মনিরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কতজন আহত তার সঠিক খবর আমাদের কাছে নেই। তবে একজন হাসপাতালে ভর্তি বলে খবর পেয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক তবে থমথমে।
এছাড়া রবিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কোনও পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান ওসি।
ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক হুমায়রা পারভীন বলেন, আহত ৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একজন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় একজনকে রংপুরে পাঠানো হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপর ৩ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।