চট্টগ্রাম নগরীর দুই নম্বরগেট এলাকায় ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গানে নেচে-গেয়ে শাহাদাত হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রোববার (৬ অক্টোবর) রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরীর খুলশীর গরীবুল্লাহ শাহ মাজার ও জামতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার দু'জন হলেন, খুলশীর ডোবারপাড় এলাকার এসএম দুলালের ছেলে মেহেদী হাসান সাগর (২৮) ও নুর ইসলামের ছেল মো. শান্ত (২৮)।
রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৭ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) শরীফ-উল-আলম। তিনি জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা ভিকটিম শাহাদাত হোসেনকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের দু'জনকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর টানা চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পৃথকভাবে ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন, ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী প্রকাশ জুয়েল (৪২), মো. সালমান (১৬) এবং আনিসুর রহমান ইফাত (১৯)। এদের মধ্যে কেবল ইফাতই ছাত্র।
গণপিটুনিতে খুনের শিকার মো. শাহাদাত হোসেন নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়া বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। তিনি স্ত্রী শারমিন আক্তারকে নিয়ে নগরের কোতোয়ালী থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে থাকতেন।
সেসময় নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ জানিয়েছেন, মূলত ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১৩ আগস্ট। ঘটনার পর ভিকটিম শাহাদাতের মরদেহ তারা প্রবর্তক মোড় এলাকায় ফেলে রাখে। একদিন পর ১৪ আগস্ট পুলিশ দেখতে পেয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। এর আগের দিন দুই নম্বরগেট এলাকায় শাহাদাত হোসেনকে কয়েক দফায় গান গেয়ে গেয়ে তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করে।
ভিকটিম শাহাদাতের বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালী থানায় ৬টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে চারটি অস্ত্র মামলা, একটি ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা এবং আরেকটি চুরির অভিযোগে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক গোল হয়ে গাইছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’। কেউ মুখ দিয়ে বাজাচ্ছেন বাঁশি, কেউ করছেন উল্লাস। ঠিক তাদের মাঝখানেই নীল রঙের গেঞ্জি এবং জিন্স প্যান্ট পড়ে শাহাদাত নিস্তেজ হয়ে ঢুলছেন। তার দুই হাত বেঁধে রাখা হয়েছে স্টিলের পাইপের সাথে। গান গেয়ে গেয়েই পিটিয়ে নৃশংস ও নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওটি নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকার। যার মরদেহ গত ১৪ আগস্ট নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনে রাস্তা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। এরপর ১৫ আগস্ট শাহাদাতের বাবা মোহাম্মদ হারুন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।