আমাদের মধ্যে মিডিয়া লিটারেসি গড়ে ওঠেনি: নাহিদ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-10-07 16:05:15

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমাদের মধ্যে মিডিয়া লিটারেসি গড়ে ওঠেনি।

তিনি বলেন, আমরা জানি যে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নানা আইন-কানুন ও বিধিবিধি নিষেধ থাকে। সাংবাদিকতাকে এক ধরনের আবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা থাকে। অর্থনৈতিকভাবে গণমাধ্যমকে নানা ধরনের বাধা প্রদান করা হয়। সাংবাদিকতাকে যদি পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে চিন্তা করি তাহলে সে ধরনের চর্চা আমাদের দেশে অনুপস্থিত।

সোমবার (৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘সংবাদ মাধ্যম সংস্কার: কেনো? কিভাবে?’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা যখন মুক্ত গণমাধ্যম বা গণ্যমাধ্যম সংস্কারের কথা বলছি আজকের আলোচনায় সাংবাদিকতার পেশাদারিত্বকেই সেন্ট্রাল পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয়েছে। এটা খুবই যুক্তিযুক্ত যে সাংবাদিকতা যদি একটা পেশা হয় তাহলে কতটুকু পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করতে হবে এবং সেই কাজ যদি না করতে পারে তাহলে তার কারণ ও সমস্যা কি সেটা থেকে বের করতে হবে।

নাহিদ আরও বলেন, সবসময় সম্পাদক বা মালিক পক্ষের সঙ্গে বসা হচ্ছে কিন্তু যারা মাঠে কাজ করেন তাদের ভয়েজ আমাদের কাছে আসে না। এই অনুষ্ঠান সেই দূরত্ব দূর করতে ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করার চেষ্টা করবো।

এসময় তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, আমার খুব অল্প সময়ের দায়িত্বের অভিজ্ঞতায় সাংবাদিকতা নিয়ে আমি যেটি বুঝেছি সেটি হচ্ছে এখানে নানামুখী স্টেক হোল্ডার ও পরস্পর বিরোধী পক্ষ রয়েছে। যাদের সাথে আমাদের কাজ করতে হবে ও ঐক্যমতে আসতে হবে। যখন ওয়েজবোর্ডের কথা আসে তখন সম্পাদক ও মালিকেরা ওয়েজবোর্ডের বিরোধিতা করে। আবার অনেক সময় বিভিন্ন হাউজ থেকে বেতন পরিশোধ করা হয় না। মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকরা এগুলো নিয়ে অভিযোগ করেন আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি।

তিনি বলেন, এ বেতনের বিষয়টি সুরহা হওয়া উচিত। এটি যদি একটি পেশা হয় তাহলে সে পেশাকে মর্যাদা দিতে হবে। এখানে দাসসুলভ আচরণ করার কোন সুযোগ নেই। আমাদের এখানে সাংবাদিক সংগঠনগুলো রয়েছে তাদের সাংবাদিকদের প্রকৃত স্বার্থে কাজ করা উচিত। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে আমরা সেগুলোও বিবেচনা করব। সাংবাদিকতার যে বহুমুখী স্টেকহোল্ডার আছেন তাদের নিয়ে আমাদের একটা ঐক্যমতে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এই আন্দোলনে দেখেছি সাংবাদিকরা কি ধরনের কাজ করেছে আবার যারা গণমাধ্যমের স্টেকহোল্ডার আছেন তারা কি করেছেন।সেখানে মালিকদের এক ধরনের ভূমিকা ছিল। সেটা আমাদের জন্য একটা কেস স্টাডি। এটা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি অনেক সাংবাদিক আমাদের কাছ থেকে নিউজ নিতো কিন্তু সেটি প্রকাশ হতো না। তখন আমরা শুনেছি একটা হাউস পলিসি আছে কোনটি যাবে আর কোনটি যাবে না। আবার হাউজের উপরে হাউজ আছে কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার সময় কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। আমরা আন্দোলনের সময় দেখেছি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আন্দোলনের কোন তথ্য সেভাবে প্রচার করা হয়নি যখন শাটডাউন ছিল। আর কি তথ্য প্রচার করা হয়েছে সেটিও দেশের মানুষ দেখেছে।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, তাহলে এই দায়িত্বটা নিবে কে ? যদি দায়িত্বশীলদের বলা হয় তখন তারা বলে সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিএফআই দিয়ে চাপ দেয়া হয়েছে। কাউকে না কাউকে এ দায়িত্ব নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এই নীতিগত সংস্কারের কথা বলছি। একই সাথে সাংবাদিকদের মধ্য থেকেও সেই রেজিস্ট্যান্স প্রয়োজন। আমরা ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের মধ্যে সেটি দেখেছিলাম কিন্তু এই আন্দোলনে সেটি দেখা যায়নি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। আমরা সামনের দিকে আগাতে চাই যাতে তরুণরা এ পেশায় আসতে চায়। কিন্তু তরুণদের মধ্যে এই আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। একটা সময় এই পেশাকে মর্যাদার সাথে দেখা হত। সেই জায়গাটা এখন কমে এসেছে। সেই জায়গার সমাধানে যাওয়ার চেষ্টা করবো।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের গঠনের বিষয়ে নাহিদ বলেন, সবার সাথে বসা শেষ হয়নি। মালিক, সাংবাদিক, সম্পাদকসহ অন্যান্য সব পক্ষের সঙ্গে বসে পরামর্শ নিয়ে কমিশন গঠন করা হবে। সম্পাদক পরিষদের সাথে বসা হয়েছে। আজকের এই আলোচনাটাও এটা একধরনের ইনসাইট দিবে। বিভিন্ন পক্ষের সাথে বসতে হবে। সব পক্ষের সঙ্গে বসে তাদের একটা পরামর্শ নিয়ে আমরা সবাই সংস্কার কমিশনটা ঘোষণা করতে পারবো ।

এসময় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী, সাংবাদিক সেলিম খান, কাওসার মাহমুদ, খাজা মইনউদ্দিন, আহমেদ জুয়েল, অধ্যাপক আর আর রাজী, আসাদুল কিবরিয়া, আরিফুল সাজ্জাদ প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর