নেই রোড ডিভাইডার, যেমন খুশি রাস্তা পারাপার

, জাতীয়

জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-10-08 08:36:01

রামপুরা বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনেই সড়ক পার হওয়ার জন্য রয়েছে ফুটওভার ব্রিজ। ব্রিজ থাকলেও সাধারণ মানুষ তাদের ইচ্ছেমতো সড়কের একপাশ থেকে আরেক পাশে যাচ্ছে। অবাধে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়ার সুযোগ হয়েছে বিভাজক (রোড ডিভাইডার) না থাকায়। এমন চিত্র দেখা যায় রামপুরা আবুল হোটেল থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত।

রামপুরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে বিভাজক (রোড ডিভাইডার) না থাকায় মানুষের সাথে মোটরসাইকেল ও রিকশা ভ্যান নিয়মিত পার হতে দেখা যায়। ফলে সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সেইসাথে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এমন চিত্র শুধু এই সড়ক নয়, রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতিটি সড়কেই।

এদিকে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে চলতি বছরের গত সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪২৬ জন এবং আহত ৮১৩ জন। এরমধ্যে ১৬৪ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৭৯ জন।


সরজমিনে রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় (জুলাই-আগস্টে) রাজধানীর যেসব এলাকায় বেশি সংঘর্ষ হয়েছে ওইসব সড়কে বিভাজক (রোড ডিভাইডার) নেই বললেই চলে। আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার দু'মাস পেরিয়ে গেলেও ওইসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক বিভাজক (রোড ডিভাইডার) এখনো ঠিক করা হয়নি।

বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের রামপুরা, বাড্ডা, নতুন বাজার, কুড়িল বিশ্বরোড, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর সড়কের বিভাজক (রোড ডিভাইডার) বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্দোলনে এইসব এলাকার সড়কের রোড ডিভাইডার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা ঠিক করার দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

নগর বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খানের মতে, রাজধানী এমনিতে একটি বসবাস অযোগ্য শহর। এরমধ্য অপরিকল্পিত নগরায়নের সাথে সড়কে নেই শৃঙ্খলা। আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তন হয়েছে মানুষের চিন্তা চেতনা। কিন্তু নগরের অবস্থা দেখে মনে হয় কর্তৃপক্ষের চিন্তা চেতনায় এখনো পরিবর্তন হয়নি।

এই বিশেষজ্ঞের মতে, আন্দোলনে সড়কের যে রোড ডিভাইডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা মেরামত করতে বেশি সময় লাগার কথা না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তাদের করে দেওয়া সুযোগে নগরবাসী যেমন খুশি রাস্তা পারাপার হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সাথে মানুষের সচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। 


রামপুরা টিভি সেন্টার ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে মূল সড়ক রাস্তা পারাপার হচ্ছিলেন কালাম হোসেন। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে সড়ক কেন রাস্তা পারাপার হচ্ছেন জানতে চাইলে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে উঠতে সমস্যা হয়। তাছাড়া এখানে ডিভাইডার নেই তাই দ্রুত রাস্তা পার হওয়া যায়। 

একই অবস্থা মধ্য বাড্ডা এলাকায়। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে সবাই যার যার মত করে রাস্তা পার হচ্ছে। মধ্য বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাহামিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, এই সড়কে আগে রোড ডিভাইডার ছিল। আন্দোলনের সময় এইগুলো ভেঙে ফেলার পর থেকে সিটি করপোরেশন আর ঠিক করেনি।  

এই শিক্ষার্থীর দাবি, সবাই সড়ক দিয়ে পারাপার হওয়ায় তিনিও সড়ক দিয়ে পার হচ্ছেন। এতে কোন অসুবিধা দেখছেন না তিনি।

সড়ক দিয়ে যেমন খুশি তেমন রাস্তা পারাপার হওয়ায় গাড়ির গতি কমেছে এই সড়কে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। যানজট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্টরা।

বাড্ডা লিংক রোডে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা মামুন মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, সড়কের শৃঙ্খলা কেউ মানছে না। সাধারণ মানুষ যে যার ইচ্ছে মতো গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। ফলে গাড়ির গতি যেমন কমছে তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

এই ট্রাফিক পুলিশের মতে, সিটি করপোরেশন যদি দ্রুত রোড ডিভাইডারগুলো ঠিক করে ফেলত তাহলে মানুষ তার ইচ্ছেমত রাস্তা পার হতে পারতো না। সবাই বাধ্য হয়ে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতো। যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে আমাদের সুবিধা হতো।

সড়ক ডিভাইডারের এমন অচল অবস্থা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, রামপুরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোডের সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত ডিভাইডারগুলো মেরামত করার জন্য টেন্ডার হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোড ডিভাইডার সংস্কারে আমাদের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে। মেরামত হওয়া পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে একটু সচেতন হয়ে রাস্তা পার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর