উত্তরা ফাইন্যান্স আওয়ামীপন্থিদের কব্জায়

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-10-08 18:45:50

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দেশের অন্যতম আর্থিক প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড কব্জায় নেন আওয়ামীপন্থীরা। লাভজনক অবস্থায় থাকায় ক্ষমতাশীনদের থাবায় নিয়ন্ত্রণ চলে যায় লুটপাটকারীদের হাতে। যার মূল আয়োজন করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতসহ কিছু উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে উত্তরা ফাইন্যান্সের পরিচালনা পর্ষদে বসানো হয় সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তাকে। যিনি একসময় শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এমডি (সদ্য পদত্যাগ) সৈয়দ মিনহাজ আহম্মেদ-এর সহযোগীতায় প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির আখড়ায় পরিণত হয়। দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে পরিচালনা হওয়া প্রতিষ্ঠানটির আয় একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। যার জন্য দায়ী পর্যদের চেয়ারম্যান ও সদ্য পদত্যাগ করা এমডি।

এদিকে উত্তরা ফাইন্যান্সের বর্তমান করুণ দশা তুলে ধরে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর বরারর অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অনেকে। এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানে সাবেক ও বর্তমান কমকর্তাদের বলছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এসেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলার পাশাপাশি স্বজনপ্রীতি ও দলীয় নিয়োগ বন্ধ হয়েছে। কিন্তু ব্যতিক্রম একমাত্র উত্তর ফাইন্যান্সে। সেখানে এখনো শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল আছেন।

সূত্র বলছে, গত দেড়বছরে উত্তরা ফাইন্যান্সে পূর্বে দেওয়া কোনো লোন ফেরত আসেনি। বরং অর্থ (লোন) আদায় না করে লোনের বিপরীতে মামলার সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে যারা প্রতিষ্ঠানকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তাদের বাদ দিয়ে বেশি বেতনে নতুন অন-অভিজ্ঞ লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা একটিও এজিএম করেনি। ফলে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব অজানা রয়ে গেছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা তাদের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান ফিরে পেতে চান। এ ব্যাপারে উদ্যোক্তারা অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তবে অভিযোগ বিষয়ে বর্তমান পর্ষদের কেউ মিডিয়ায় কথা বলতে রাজি হননি।

সুনাম ও সুদিন হারিয়েছে উত্তরা ফাইন্যান্স

বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড একটি অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স পেয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে অতি সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত মালিক__ অধিকাংশ শেয়ার হোল্ড করেন যারা তাদের পরিচালনায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নগদ ডিভিডেন্ড ও বোনাস শেয়ার দিয়ে সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছিল। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানটি এ+ গ্রেডের প্রতিষ্ঠান হিসাবে শেয়ার বাজারে অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজস্বখাতে সর্বোচ্চ করদাতা হিসাবে জাতীয় রাজস্ববোর্ড থেকে পরপর চারবার শ্রেষ্ট করদাতা ভূষিত হয়েছিল। নিয়মিত ভ্যাট প্রদান করে অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা পালন করেছিল। ২০১৯ সালের পর প্রতিষ্ঠানটি বিগত আওয়ামী সরকারের কিছু স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠির ষড়যন্ত্রের শিকার হয় এবং সেই ষড়যন্ত্রের চুড়ান্ত রূপ নেয় ২০২১-২০২২ সালের দিকে যার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারী পুরাতন পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে। বর্তমান পর্যদের এমডি সৈয়দ মিনহাজ আহম্মেদ ও চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো রকম কারণ ছাড়াই পুর্বের নিরোপরাধ ৫০/৬০ জন কর্মকর্তাকে সম্পূর্ন অন্যায়ভাবে চাকুরীচ্যুত করেছে এবং তাদের নিজেদের আত্মীয়স্বজন ও অদক্ষ বা আজ্ঞাবহ লোকদের অধিক বেতনে নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক বর্তমান পর্ষদ এখন পর্যন্তও কোনো আর্থিক বিবরণী তৈরি বা পেশ করতে পারেনি। যার কারণে AGM বা শেয়ার হোল্ডারদের কোন ধরনের Dividend দিতে পারেনি। এতে ২০১৯ সালে যে শেয়ারের মূল্য ছিল ৮০ টাকা বর্তমানে দরপতনে সেই শেয়ারের মূল্য শেয়ারপ্রতি ১৭ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা সমস্ত শেয়ার হোল্ডারদেকে হতাশ করেছে। যার কারণে সরকারও ভ্যাট-ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমান পর্ষদ আসার পর বিনিয়োগ আদায়ের পরিমাণ একেবারেই শুন্যের কোঠায়। ২-৩টি যাও বিনিয়োগ করেছে তাও কু-ঋণ হিসাবে পরিণত হয়েছে। সামান্য আদায়কৃত টাকা (লোন আদায়) দিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে- যা বাৎসরিক প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা। এতে প্রতিষ্ঠানের মূলধন ঘাটতি হচ্ছে এবং অপ্রয়োজনীয় ও অগ্রহনযোগ্য খরচ বাড়ছে। যেমন- কক্সবাজার ভ্রমণ, ২ কোটি টাকার মূল্যের এমডি ও চেয়ারম্যানের গাড়ি ক্রয়, চেয়ারম্যানের নিজস্ব লোককে লিগ্যাল অ্যাডভাইজর ও লিগ্যাল ফার্ম নিয়োগ দিয়ে লিগ্যাল ফি পূর্বের চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

অভিযোগ আছে, প্রতিষ্ঠানের জায়গার ভাড়া বাবদ ফ্লোরের মালিকদেরকে গত ৪ বছর কোনো ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর