বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সংবিধান বাতিল করলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হবে। সংশোধন বা সংযোজন করা যেতে পারে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে নীলফামারী সদরের রামগঞ্জের দুবাছুরি দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসা মাঠে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ওই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসাবে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
'আমরা বিএনপি পরিবার' এর আয়োজনে ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারী নীলফামারী সদর উপজেলার র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত বিএনপির নেতা গোলাম রব্বানীর পরিবারকে নতুন বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের এই জনসভার আয়োজন করা হয়।
অনেক তরুণ শিক্ষার্থীরা দেশের সকল সংবিধান বাতিল করতে বলছে এই কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, একটি জাতীয় আত্মজীবনী হচ্ছে সংবিধান। সেটি সংযোজন হতে পারে, সংশোধন হতে পারে। সেখানে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিজমের যে বৈশিষ্ট্য সেটা বাদ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাতিল করা যেতে পারে না। দেশের সংবিধান বাতিল করা হলে ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধকে অস্বীকার করা হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রয়েছে, সংশোধন রয়েছে। কিন্তু বাতিল করা হয়নি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্টের মহাবিপ্লবের পর প্রত্যেকেই সমর্থন দিয়েছে ড. ইউনূস সাহেবকে। কিন্তু আমাদের বক্তব্য একটি জনপ্রত্যাশা-জনআকাঙ্ক্ষার বাইরে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার অন্য এজেন্ডা নিয়ে কাজ করলে দেশের মানুষ মেনে নেবে না। এখনো চালের দাম কমেনি, চিনি, আলুর দাম কমেনি। শেখ হাসিনার কারণে গত বছর থেকে ভারত থেকে আলু আমদানি করতে হয়। এবারো যদি আলু আমদানি করতে হয়, তাহলে মানুষ বলবে ড. ইউনূস সাহেবের সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি, তাহলে কি লাভ হলো? বাজারে বয়লার মুরগীর দাম কেন বাড়ছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, ৫ মে রাতে শেখ হাসিনার সরকার কত আলেম-ওলামাকে খুন করেছে সেই হিসাব কিন্তু এখনও পাওয়া যায়নি। আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, কেউ কেউ বলছেন- আনুপাতিক হারে নির্বাচন। কেন? আনুপাতিক নির্বাচন কিসের জন্য? এটা কি তৃণমূলের মানুষ বোঝে?
যেসব রাজনৈতিক দলের ভোটের সংখ্যা বেশি নয় তারা আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার কথা বলছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, যারা ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে চান; যাদের ভোটের সংখ্যা বেশি নয়, তারা এটা একটা কৌশল হিসেবে নিয়েছেন। এটা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। এ ধরনের কোনো পদ্ধতি নিয়ে যদি আপনারা ষড়যন্ত্র করেন, এই ষড়যন্ত্র কিন্তু মানুষ ধ্বংস করে দেবে।
তিনি আরো বলেন, দেশে হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি হচ্ছে। আইজিপি তার বক্তব্যে বলছে আমাদের হাতে ম্যাজিক নেই। একদিনে আইনশৃংখলায় পরিবর্তন আনা সম্ভব না। কিন্তু দেশের মানুষ তো দেখবে আপনার দায়িত্ব ও উদ্যোগ। কেনো ব্যবসায়ীদের হত্যা করা হচ্ছে, কারা করছে কেউ প্রকৃত আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারছেন না। জনগণ আপনাদের ব্যর্থতা দেখতে চায় না, জনগণ ভালো ফলাফল দেখতে চায়।
বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব আরো বলেন, দেশের অর্থনৈতিক দিককে আবার স্বাভাবিক করে তুলতে হবে। কিন্তু এখনও জিনিসপত্রের দাম কেনো কমাতে পারছেন না, কেন সোনালী মুরগী বয়লার মুরগীর দাম ২০-৩০ টাকা বাড়বে। কেন চিনির দাম প্রতিদিন ১০টাকা করে বাড়বে। ব্যাংকে মুদ্রা সংকোচন নীতি নিয়েছেন। কিন্তু এমন সংকোচন নীতি নিয়েন না, যে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে গিয়ে তার এ্যাকাউন্ট থেকে টাকাই উত্তোলন করতে না পারে। এমন পদ্ধতি অবিলম্বন করুন যেনো দেশের সম্পদ ও টাকা বাহিরে পাচার না হয়, মানুষ যেনো প্রয়োজনে ব্যাংকে টাকা তুলতে পারে।
আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর) আসাদুল হাবিব দুলু, আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা ও দলের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জাসান সামু, নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার, সহ-সভাপতি মীর সেলিম ফারুক, মোস্তফা প্রধান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম, বিএনপি আইনজীবী ফোরাম নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি এ্যাডঃ আবু মো. সোয়েম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান কোকো, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম দোলন, নীলফামারী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আল মাসুদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।