‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি বুড়িমারী স্টেশন থেকে সারসরি ঢাকায় যাত্রার দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে বুড়িমারী টু ঢাকা আন্তনগর ট্রেন বাস্তবায়ন আন্দোলন পরিষদ।
জানা গেছে, নাম ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ হলেও এ ট্রেনে উঠতে বুড়িমারী স্থলবন্দরের যাত্রীদের দীর্ঘ প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে তবেই উঠতে হয়। একই ভাবে ঢাকা থেকে ফিরে লালমনিরহাটে যাত্রা শেষ করে ১০০ কিলোমিটার যেতে হয় সড়ক পথে। ফলে ত্রি-দেশিয় বাণিজ্য কেন্দ্র খ্যাত বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী ও যাত্রী সাধারনের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হলেও সুফল মেলেনি। তাই বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের নামের স্বার্থকতা রাখতে ও পাসপোর্টধারী যাত্রীসহ ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে বুড়িমারী থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রার দাবি উঠে উদ্বোধনের দিন থেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের অন্যতম বুড়িমারী স্থলবন্দরটি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত। যা ত্রি-দেশিয় বাণিজ্য কেন্দ্র নামে খ্যাত। এই স্থলবন্দর দিয়ে যেমন বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। তেমনি প্রতিদিন শত শত যাত্রী ভারত, নেপাল, ভুটান যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে সরাসরি কোনো আন্তনগর ট্রেন না থাকায় রেল সেবা থেকে প্রায় বঞ্ছিত থেকে যাচ্ছেন দেশি-বিদেশি যাত্রী। শুধু তাই নয়, লালমনিরহাট জেলাটি ভৌগলিকভাবে লম্বা হওয়ায় সদর বাদে বাকি ৪ উপজেলার প্রায় ১০ লক্ষাধীক মানুষজনও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
এর কারণ হিসেবে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলা সদর থেকে সোজা উত্তর দিকে আদিতমারী এরপর কালীগঞ্জ তারপরে হাতীবান্ধা এবং সর্বশেষ পাটগ্রাম উপজেলা অবস্থিত। সর্ব শেষে রয়েছে বুড়িমারী স্থলবন্দর। ২০০৪ সালে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন উদ্ধোধনের পর থেকেই শুধুমাত্র লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে চলাচল করছে। চলতি বছর ১২ মার্চ বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রথম দিন বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে যাত্র শুরু করে ঠিকই। কিন্তু পরদিন থেকেই তা শুধু লালমনিরহাট রেলস্টেশন থেকে চলাচল করে আসছে। এতে করে জেলার ৪ উপজেলার প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ সরাসরি যাতায়াত থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন। নাম বুড়িমারী হলেও বুড়িমারীর যাত্রীদের ট্রেন পেতে যেতে হয় আরও একশত কিলোমিটার। তাই নামের স্বার্থকতাও ভুলণ্ঠিত হচ্ছে।
ভুক্তভোগী আরিফা সুলতানা স্নিগ্ধা বলেন, সরাসরি ট্রেন চলাচলে বুড়িমারী রেলস্টেশনে ওয়াস ফিডসহ প্রয়োজনীয় কিছু অবকাঠামো তৈরীতে ৩ মাসের সময় নিয়েছিল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির প্রায় ৮ মাস হতে চললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এই অবস্থায় গত ১২ সেপ্টেম্বর হাতীবান্ধা রেলস্টেশনে শান্তাহার টু বুড়িমারী চলাচলকারী করতোয়া এক্সপ্রেস টেনটি প্রায় দুই ঘণ্টা আটকিয়ে রেখে প্রতিবাদ করে স্থানীয় ছাত্র জনতা। পরে রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে ট্রেনটি ছেড়ে দেয়া হলেও সরাসরি বুড়িমারী থেকে লালমনি ও বুড়িমারী এক্সপ্রেস চলাচলের ব্যাপারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাতীবান্ধার সাংবাদিক ফারুক হোসেন নিশাত বলেন, আমাদের জেলার সাথে রাজধানী ঢাকা যাতায়াতে দুটি আন্তঃনগর ট্রেনই চলে লালমনিরহাট সদর থেকে। কিন্তু বাকি চার উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষ কী এদেশের নাগরিক না? প্রশ্ন তুলেন তিনি।
স্কুল শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক রুবেল বলেন, ৫ টি উপজেলা নিয়ে লালমনিরহাট জেলা গঠিত। কিন্তু চার উপজেলার মানুষজনসহ বুড়িমারী স্থলবন্দরের দেশি-বিদেশি যাত্রীরা অন্তঃনগর ট্রেনে করে সরাসরি ঢাকা যেতে পারছেন না! বাংলাদেশ রেলওয়ের এটা কোন ধরণের বৈষম্য? জানতে চান তিনি। লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় শহর হলেও আন্তনগর ট্রেন সেবা বঞ্চিত জেলার ৪ উপজেলার মানুষ। এ বৈষম্য দূর করার এখনই সময়।
সরাসরি বুড়িমারী টু ঢাকা আন্তনগর ট্রেন বাস্তবায়ন আন্দোলন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক কমরেড শওকত হোসেন আহমেদ বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্ঠা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। পাশাপাশি রেল উপদেষ্ঠাসহ সচিব এবং সংশ্লিষ্টদের অনুলিপি দিয়েছি। দ্রুত বুড়িমারী টু ঢাকা সরাসরি আন্তনগর ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সেই সাথে এর দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আব্দুস সালাম বলেন, বুড়িমারী থেকে সরাসরি আন্তনগর ট্রেন চলাচলে আমরা আরও একটি রেক ও বুড়িমারী স্টেশনে প্রয়োজনীয় অবকাঠো তৈরির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। সেখান থেকে উদ্যোগ নেয়া হলে বুড়িমারী থেকে সরাসরি আন্তনগর ট্রেন চলাচল সম্ভব হবে।
বিভাগীয় কর্মকর্তা হিসেবে তার সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বলেন, লালমনিরহাটের ভিতরে থাকা ৪ উপজেলার প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের জন্য সরাসরি আন্তনগর ট্রেন চলাচলের দাবি যৌক্তিক এবং তা বাস্তবায়ন প্রয়োজন।