‘বাংলাদেশ ফিলিস্তিন-কাশ্মীর-মিয়ানমার হোক সেটা আমরা চাই না’

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো | 2024-11-06 19:27:40

চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে উদ্ধার অভিযানে যাওয়া যৌথবাহিনীর ওপর এসিড হামলা ও ভারী ইট-পাটকেলসহ ভাঙা কাঁচের বোতল ছুঁড়ে মারার প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম’।

বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। মিছিলটি আসকারদীঘি হয়ে কাজির দেউড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় রাসেল আহমেদ, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক জোবায়ের আলম মানিক, চট্টগ্রাম কলেজ শাখার সমন্বয়ক ইবনে হোসাইন জিয়াদ প্রমুখ।

সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুল হক বলেন, ‘হাজার বছর ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমান একতাবদ্ধ থেকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়েছি। কিন্তু কয়েকবছর ধরে দেখা যাচ্ছে, একটা উগ্রবাদী সংগঠন আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে। আমরা চাই না, বাংলাদেশ ফিলিস্তিন হোক। আমরা চাই না বাংলাদেশ কাশ্মীর হোক। আমরা চাই না বাংলাদেশ মিয়ানমার হোক। এদেশের ৯০ ভাগ মুসলমান, কিন্তু আমরা শান্তিপ্রিয়। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। এ কারণে আমরা ছোটবেলায় হিন্দু শিক্ষকের কাছে যেমন পড়েছি, একইসাথে হিন্দু ভাইয়েরা মুসলমান শিক্ষকের কাছে পড়েছে। কখনোই সাম্প্রদায়িক উসকানি দিইনি।’

কোটি কোটি ছাত্র-জনতা থাকতে এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না উল্লেখ করে শহীদুল হক আরও বলেন, ‘একটি ছেলে ফেসবুকে ইসকনের বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়েছে, সে ক্ষমা চেয়েছে, তারপরও তার দোকানে হামলা করেছে, আক্রমণ করেছে, ভাংচুর করেছে- এটা কিসের নমুনা? তোমরা কি আমাদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বানাতে চাও ? তোমরা কি আমাদের মিয়ানমার বানাতে চাও ? তোমরা কি আমাদের কাশ্মীর বানাতে চাও? স্পষ্ট করে একটা কথা বলতে চাই, এদেশের কোটি কোটি ছাত্র-জনতা থাকতে এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’

কিছু উগ্রবাদী সংগঠন আওয়ামী লীগের দালাল ও দোসর হয়ে আমাদের এদেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে জানিয়ে সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘কিছু উগ্রবাদী সংগঠন আওয়ামী লীগের দালাল হয়ে, আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে আমাদের এদেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। আমাদের সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। আমরা যখন আওয়ামী ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলাম, তখন এই সেনাবাহিনী আমাদের সহযোগিতা করেছিল। তাদের ওপর উগ্র সন্ত্রাসী সংগঠন হামলা করেছে। হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, আমাদের এই দেশকে যদি অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হয়, সেই ষড়যন্ত্র আমরা রুখে দেব। ষড়যন্ত্রকারীদের ঠাঁই এ বাংলার মাটিতে হবে না। যেদিকে পা বাড়াবেন, সেই পা আমরা ভেঙ্গে দেব।’

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে রাসেল আহমেদ বলেন, ‘জুলাইয়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সবাই মিলেমিশে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়েছি। আওয়ামী লীগ হিন্দু, মুসলিম- প্রত্যেকটা ধর্মকেই রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু আমরা বলি, আমরা সকলেই এ বাংলাদেশের নাগরিক। আপনাদের অন্ধ চোখ আপনারা খুলুন। কারও রাজনীতির হাতিয়ার আপনারা হবেন না। আমাদের নতুন বাংলাদেশ ভারত-আমেরিকা গঠন করে দেয়নি, হাজার-হাজার ছাত্র-জনতার রক্তে নতুন বাংলাদেশ হয়েছে। সুতরাং এ বাংলাদেশকে নিয়ে কেউ উগ্রবাদি কর্মকাণ্ড করলে ছাত্র-জনতা সেটা সহ্য করবে না।’

হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সভা-সমাবেশ করা সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আমরা দেখেছি, ইসকন কিংবা এ ধরনের সংগঠন যখন সমাবেশ করে, তাদের পেছনে অনেক আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ কিংবা তাদের দোসরেরা থাকে। তাদের নিয়ে সতর্ক হবার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের সকল যৌক্তিক দাবিতে আমাদের সমর্থন থাকবে।’

এর আগে, মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ওসমান আলী নামের একজন ব্যক্তির ইসকনবিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর টেরীবাজার এলাকার হাজারী লেনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আনুমানিক ৫০০ থেকে ৬০০ জন দুষ্কৃতিকারী হাজারী লেনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হন। স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যদের ৬টি টহল দল উক্ত এলাকায় পৌঁছায়। বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা এবং মব জাস্টিস রোধে যৌথবাহিনী ওসমান আলী ও তার ভাইকে উক্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করে। উত্তেজিত জনতাকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টি আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও এক পর্যায়ে উগ্র বিশৃঙ্খলাকারীরা আরও আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে। দুর্বৃত্তরা এ সময় যৌথবাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে জুয়েলারির কাজে ব্যবহৃত এসিড হামলা চালায় এবং ভারী ইট-পাটকেলসহ ভাঙা কাঁচের বোতল ছুঁড়তে শুরু করে। এতে সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্যসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত হন। সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্যকে বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, চট্টগ্রামে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও, ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা ইট ছুঁড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইন্সিল্ড ভেঙ্গে ফেলে। উদ্ধার অভিযানের পর দুর্বৃত্ত সনাক্তে যৌথবাহিনীর ১০টি টহল দল রাত সাড়ে নয়টার দিকে হাজারী লেনে গেলে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা পুনরায় যৌথবাহিনীর ওপর পুনরায় এসিড সদৃশ বস্তু ছুড়তে শুরু করেন। এসময় যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে। তবে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে ৮২ জনকে আটকের তথ্য দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় সনাতন ধর্মবিশ্বাসী সংগঠন ‘আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ- ইসকন’ জড়িত বলে জানিয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর