বৈদ্যুতিক মিটার বক্সে বিকাশ নম্বর লেখা চিরকুট রেখে মিটার নিয়ে যাচ্ছে একটি চোর চক্র। বাধ্য হয়ে চক্রের দেওয়া বিকাশ নম্বরে গোপনে টাকা পাঠিয়ে চুরি যাওয়া মিটার ফেরত নিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এমন অভিনব চুরির কারবার চলছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে।
সম্প্রতি ওই এলাকার এনআরবিসি নামক একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপশাখায় মিটার চুরির ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থানায় এজাহার দিলে চিরকুট লিখে মিটার চুরির ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে আসে। চলতি এক সপ্তাহে ওই এলাকায় তেলের মিল, স’মিল, কেবল টিভি, ইন্টারনেট সরবরাহ প্রতিষ্ঠানসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মিটার চুরি করেছে ওই চিরকুট চক্রটি।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) চিরকুট লিখে মিটার চুরির ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কম-কে নিশ্চিত করেছেন গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম। এর আগে গত ১০ নভেম্বর এই অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
অভিযোগে বলা হয়, মহিমাগঞ্জ এলাকায় প্রায় প্রতি রাতেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা ও ব্যাংকের একটি উপশাখা থেকে থ্রি-ফেজ বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করছে চোর চক্র। চুরির পর চোরেরা খুলে নেওয়া মিটারের বোর্ডে এবং চিরকুটে লিখে রেখে যাচ্ছে বিকাশ নম্বর। তবে, গ্রাহকরা তাদের নিজেদের স্বার্থে গোপনে চক্রের দেওয়া বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে অনেকের মিটার ফেরত নেন। ফলে বিষয়টি গোপন থাকায় প্রকাশ্যে আসেনি।
কিন্তু সম্প্রতি একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপশাখার মিটার চুরির পর বিকাশে টাকা পাঠিয়েও মিটার ফেরত না পাওয়ায় বিষয় সমিতিতে জানান ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অতিদ্রুত চোর চক্রকে শনাক্ত করে গ্রাহকের চুরি যাওয়া মিটারসহ অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি করা হয় অভিযোগে।
সূত্র জানায়, ওই বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির শাখা ভবনের বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করে নিয়ে চিরকুটে দেওয়া বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানের শর্তে মিটার ফেরত দেওয়ার কথা জানায় চোর চক্রটি। পরে চিরকুটে দেওয়া নম্বরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করে মিটার ফেরত পেতে এক পর্যায়ে ছয় হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেয়। পরে টাকা কম হয়েছে জানিয়ে মিটার ফেরত দিতে আরও দুই হাজার টাকা দাবি করে চোর চক্রটি। তবে, পরের দুই হাজার টাকাসহ মোট আট হাজার টাকা নিয়েও মিটার ফেরত না দিয়ে তৃতীয় দফায় আরও চার হাজার টাকা দাবি করে চিরকুট চক্র। শুধু তাই নয়, এই টাকা না দিলে নতুন মিটার লাগালেও আবারো চুরি হবে বলেও হুমকি দেয় চক্রটি।
এসব ব্যাপারে গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহিমাগঞ্জ সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. মাহমুদুল ইসলাম জানান, গত এক সপ্তাহে মহিমাগঞ্জের একটি তেলের মিল, দুইটি স’মিল, একটি কেবল টিভি ও একটি ইন্টারনেট সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এবং এনআরবিসি নামের একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপশাখার বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করেছে চিরকুট চোর চক্র। এরমধ্যে অনেকেই বিকাশে টাকা পাঠিয়ে মিটার ফেরত নিয়েছেন। আমাদেরকে কিংবা আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে গোপনে টাকার বিনিময়ে মিটার ফেরত নেওয়ার কারণে এই চক্রটির দৌরাত্ম্য বেড়েছ।
এসময় চক্রটির হাত থেকে রক্ষায় আইনগত ব্যবস্থা এবং গ্রাহকদের সচেতন করার পাশাপাশি মিটার সুরক্ষায় বিভিন্ন সতর্কতামূলক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, চিরকুটে বিকাশ নম্বর দিয়ে মিটার চুরি হওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের একটি অভিযোগ পেয়েছি। চক্রটিকে ধরতে পুলিশি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।