গঙ্গাস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হল রাস পূর্ণিমা

, জাতীয়

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কলাপাড়া, পটুয়াখালী | 2024-11-16 11:21:21

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গঙ্গা স্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী রাস মেলা।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) ভোর ৬টায় জানা অজানা জাগতিক সকল পাপ মোচনের আশায় সৈকতের নোনা জলে গাঁ ভাসিয়ে এ গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পূণ্যার্থীরা। তবে এ স্নানের আগে সৈকতে মোমবাতি, আগরবাতি, বেল পাতা, ফুল, ধান, দুর্বা, হরিতকী, ডাব, কলা, তেল ও সিঁদুর সমুদ্র জলে অর্পন করে সনাতনী নারীরা।

এসময় উলুধ্বনি ও মন্ত্রোপাঠে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সৈকত। এছাড়া মাথা ন্যাড়াসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পিন্ডদান করেন অনেক মানতকারীরা।

সুদীর্ঘ দুই শত বছরের পুরনো এ ঐতিহ্যের স্বাক্ষী হতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমায় হাজারো পূণ্যার্থীরা।

খুলনা থেকে আগত শ্রী গোবিন্দ বলেন, প্রভুর কাছে আমাদের একমাত্র চাওয়া যাতে দেশের সকল মানুষ ভাল থাকে। রাতভর ভগবানের গুণ কীর্তন শেষ করে সকালে সমুদ্র স্নানের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে সুখ-শান্তি চেয়েছি।

পুণ্যার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাসমান দোকানদাররা ভিড় জমিয়েছে এ রাস মেলায়। বরিশাল থেকে আগত ব্যবসায়ী শ্রী নীহার বলেন, আমরা রাস পূর্ণিমায় উৎসবের পাশাপাশি মহিলাদের সিঁদুর বিক্রি করেছি, প্রতি বছরই আমরা আসি। এবছর ভালো বিক্রি করেছি।

কুয়াকাটা সৈকতে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক ইন্জিনিয়ার নিহার রঞ্জন মন্ডল জানান, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই দেশে সবাই মিলে একটি সুন্দর লোকজ সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তুলেছে, যা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। আমাদের এই মন্দিরের পাশেই একটি মসজিদও রয়েছে, তারাও আমাদের এই আয়োজনে অনেক সহযোগীতা করেছে। আমাদের মধ্যে বেশ সু-সম্পর্ক।


গত বুধবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু হয়ে শনিবার সকালে সমুদ্র স্নানের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। রাস পূজায় অংশ নিতে পুণ্যার্থীদের ভিড়ের পাশাপাশি পর্যটকদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। এই উৎসবকে নির্বিঘ করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ছিল কঠোর নজরদারি।


কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. রবিউল ইসলাম বলেন, রাস উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন আয়োজন হাতে নিয়েছি, বরাবরের থেকে একটু আলাদা বিনোদন দিতেই আমরা তিনদিনের কনসার্টের আয়োজন করেছি। মার্কেটের প্রসার বাড়ানো, আলাদাভাবে টয়লেট, চেইঞ্জিং রুম তৈরি করা সহ ছিল নানা আয়োজন। যে কারণে এবারের আয়োজন প্রত্যেকটা পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থী নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আয়োজন উদযাপন করেছে। আয়োজন শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে আছি।


ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের প্রায় ৪ শতাধিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত ছিল। আজকে সকালে রাসমেলার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপত্তা বহাল রাখবো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর